চট্টগ্রামে প্রতিমা ভাঙ্গার অভিযোগে আটক ব্যক্তিকে কুমিল্লার বলে দাবি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, কবির নামের এই ব্যক্তিকে গত ১০ তারিখ চট্টগ্রামে আটক করা হয়, কুমিল্লার বলে প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় পূজা মণ্ডপে কুরআন রাখার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেখুন এমন দুটি পোস্ট এখানে এবং এখানে।
আজ ১৪ অক্টোবর 'অপরূপা' নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "কুমিল্লায় কোরআন অবমাননায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখুন উগ্রবাদ কে না বলুন।" পোস্টের সাথে একটি ছবিও যুক্ত করা হয়েছে যেখানে গামছা গলায় একজন সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। মুখে কালো ঘন দাড়িও দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ছবিটির ব্যক্তিটিই গতকাল বুধবার কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
পোস্টের সাথে যুক্ত ছবিটি আলাদাভাবে দেখুন এখানে-
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে দেখেছে, পোস্টের সাথে যুক্ত ছবির ব্যক্তিটি কুমিল্লার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নন। নানাভাবে সার্চ করে দেখা গেছে, মূলত চলতি মাসের গত ১০ তারিখ চট্টগ্রামের একটি প্রতিমা ভাঙ্গার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত এক ব্যক্তির ছবি এটি।
প্রথমত, কুমিল্লার মণ্ডপে কুরআন অবমাননার ঘটনাটি গতকাল ১৩ তারিখ ঘটলেও লাল গামছা পরিহিত ব্যক্তির ছবিটি গত ১১ তারিখ থেকে ফেসবুকে অসংখ্য প্রোফাইল ও পেজ থেকে আপলোড হতে দেখা গেছে। দেখুন এমন একটি পোস্ট এখানে--
আরেকটি পোস্ট দেখুন এখানে--
ছবি দুটিতে সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তির পাশে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ঘটনাটি ১৩ তারিখ ঘটলে তার পূর্বে ১১ তারিখে সেই ছবি শেয়ার করা বাস্তবসম্মত নয়।
পরের পোস্ট অর্থাৎ 'সুমি রাণী' এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে উক্ত ছবির সাথে একটি বিস্তারিত ক্যাপশন জুড়ে দেয়া হয়েছে। ১১ তারিখ করা ওই পোস্টে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি ফিরিঙ্গী বাজার শিববাড়ির প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় ফল ছুঁড়ে প্রতিমার হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। পরে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসা হয়।
ক্যাপশনে উল্লেখিত সুত্রগুলো যাচাই করতে গিয়ে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারের একটি ভিডিও ক্লিপ পেয়েছে বুম বাংলাদেশ। 'শ্রীশ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দির' নামের ফেসবুক পেজে ১ মিনিট তিন সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে আলোচ্য ব্যক্তি এবং সেই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরো কিছু কর্মকর্তাকে দেখা যায়। দেখুন গত ১২ অক্টোবর পোস্ট করা সেই ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট--
ভিডিওটি দেখুন এখানে--
এছাড়া চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ফেসবুক পেজেও সেই ব্যক্তি ছাড়াও আরো দুজনকে গ্রেফতার করার খবর প্রকাশ করে। ১১ তারিখে করা এই পোস্টে সেই একই ব্যক্তির ভিন্ন আরেকটি ছবি প্রকাশ করা হয়। দেখুন স্ক্রিনশট--
পোস্টটি দেখুন এখানে।
তাছাড়া গত ১৪ তারিখ 'চট্টগ্রামের প্রতিদিন' নামক একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে ভাইরাল এই ছবিটি, কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার ব্যক্তির নয় বলে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক তফাজ্জল ইসলাম। তিনি বলেন, 'এটা তো পঞ্চমীর (১০ অক্টোবর) দিনের ছবি। জাম্বুরা মেরে প্রতীমার হাত ভাঙ্গার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে সে। তার নাম কবির। কুমিল্লার ঘটনার সাথে এই ছবির সম্পর্ক নাই। তাকে পরদিনই কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।'
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এই খবরটি পড়ুন এখানে। উক্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম 'কবির' হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মূলত গত ১০ তারিখ তিনি প্রতিমা ভাঙ্গার দায়ে চট্টগ্রামে গ্রেফতার হন।
উল্লেখ্য গত ১৩ তারিখ কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে এখন পর্যন্ত কোন গ্রেফতারের খবর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মূলধারার গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ ১০ তারিখে চট্টগ্রামে প্রতিমা ভাঙ্গার দায়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ১৩ তারিখে কুমিল্লায় মণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করা হচ্ছে যা বিভ্রান্তিকর।