ছবির শিশুটি ভারতের ফাইজান, সাহায্যের আবেদনটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতীয় শিশুর ছবি দিয়ে বাংলাদেশের তাহমিদ দাবি করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি অসুস্থ শিশু ও তার অভিভাবকের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির নাম 'তাহমিদ হাসান'। আর পরিচয় হিসেবে কেবল পঞ্চগড় জেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নে শিশুটির বাড়ি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টে শিশুটির পিতামাতা সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, শিশুটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) হাসপাতালে ভর্তি আছে। পোস্টটিতে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ এবং রকেটের নম্বরও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২০ নভেম্বর 'Mr. Sylheti' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে করা এরকম একটি পোস্ট নিচের স্ক্রিনশটে দেখুন--
ভাইরাল পোস্টে উল্লেখিত ছবিগুলো একসাথে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণাপূর্ণ। মূলত, ভারতীয় এক শিশুর ছবি দিয়ে বাংলাদেশের তাহমিদ হাসান বলে দাবি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাইরাল পোস্টে যুক্ত করা চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রও অন্য এক শিশুর।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান কিটো-এর ( www.ketto.org) ওয়েবসাইটে "I'm Losing A Child For The Second Time. Help Me Save My Son's Life" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ছবির এক বছর বয়সী শিশুটির নাম মোহাম্মদ ফাইজান। শিশুটি ORAI মিউটেশন নামের একটি রোগে আক্রান্ত, যার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪৫ লাখ রুপি। প্রতিবেদনে শিশুটির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা চেয়ে ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাবার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স লিমিটেড ও অস্টার মিমস্ হসপিটালের প্যাডে এক চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রও জুড়ে দেয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি ক্রাউডফাইন্ডিং প্লাটফর্ম কিটো-এর (Ketto) অফিশিয়াল টুইটার একাউন্টেও চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে শিশুটির জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে পোস্ট করতে দেখা গেছে। দেখুন--
এছাড়াও, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোয় যুক্ত করা মেডিকেল রিপোর্টটিও প্রতারণাপূর্ণ। মূলত জুয়াইরিয়া বিনতে হামজা নামের এক শিশুর মেডিকেল রিপোর্টে নামের অংশ এডিট করে 'তাহমিদ হাসান' লিখে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
এদিকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে উক্ত পোস্টগুলোতে সহযোগিতা পাঠানোর জন্য দেয়া নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাহমিদ নামের বাংলাদেশের কোন শিশু সত্যিই রোগাক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) হাসপাতালে ভর্তি আছে কিনা বা তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন কিনা, সে বিষয়ে বুম বাংলাদেশে আলাদাভাবে যাচাই করেনি। পরবর্তীতে উল্লেখযোগ্য তথ্য পেলে প্রতিবেদনে তা যুক্ত করা হবে। তবে নিশ্চিতভাবেই ছবিটি বাংলাদেশি কোনো শিশুর নয়।
অর্থাৎ ভারতীয় শিশুর ছবি জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশি শিশু দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানানো হচ্ছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।