ছবির শিশুটি বাংলাদেশি নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতীয় শিশুর ছবি দিয়ে বাংলাদেশের মো সবুজ দাবি করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির নাম 'মো সবুজ'। দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির পায়ের ভিতরে টিউমার হয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরও টিউমারের বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে পোস্টগুলোতে শিশুটির চিকিৎসা কেন্দ্র, ঠিকানা বা পরিবারের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে শিশুটির পিতা আইয়ুব আলী গাজীপুর সদরের নলজানি গ্রামের বাসিন্দা আবার লেখা হয়েছে আইয়ুর আলীর গ্রামের বাড়ি নিলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কাচারিবাজার গ্রামে। এছাড়া শিশুটির বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৩ বছর। পোস্টগুলোতে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ নম্বরও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১১ জানুয়ারি 'Bangladesh Help Line' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে করা এরকম একটি পোস্ট নিচের স্ক্রিনশটে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা তথ্য বিভ্রান্তিকর ও সাহায্যের আবেদন প্রতারণাপূর্ণ। ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে রোগাক্রান্ত বাংলাদেশের কোনো শিশুর নয় বরং ভারতীয় এক শিশুর। এছাড়া শিশুটির বয়স তিন বছর নয় বরং শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেয়া 'প্রিম্যাচিউর বেবি'।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতের অস্বচ্ছল মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান কিটো-এর ( www.ketto.org) ওয়েবসাইটে 'My Baby Battles For Her Life And We Need Your Support To Save Her' শিরোনামে একটি নিবন্ধে ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ছবির শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয়ার (প্রিম্যাচিউর বেবি) ফলে বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ রুপি প্রয়োজন। নিবন্ধটিতে শিশুটির জন্য তহবিল সংগ্রহকারী হিসাবে শানিমল নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি ক্রাউডফাইন্ডিং প্ল্যাটফর্মটিতে ওই শিশুর জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে করা নিবন্ধে ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি শহরের হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দেখুন--
এছাড়া, কিটো-এর টুইটার একাউন্টেও ২০২১ সালের জুলাই মাসে শিশুটির জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে পোস্ট করতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই ছবিটি বাংলাদেশি কোন শিশুর নয়। একইসাথে পোস্টগুলোতে সহযোগিতা পাঠানোর জন্য দেয়া নম্বরগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
সুতরাং ভারতীয় শিশুর ছবি জুড়ে দিয়ে তাকে বাংলাদেশি শিশু দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানানো হচ্ছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।