যুক্তরাষ্ট্রে রুটি চুরি নয় বরং হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কিশোরের ছবি এটি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১১ সালে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে সহোদর হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ফার্নান্দেজ কিশোর আইনে সাজাপ্রাপ্তও হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এক কিশোরের ছবি পোস্ট করে বর্ণনায় 'বিচারকের দন্ড' শিরোনামে একটি ঘটনা শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টে যুক্ত করা ছবিতে কয়েদির পোশাকে এক কিশোরকে পুলিশ ঘেরা অবস্থায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর 'Provudan Samadder' নামের একটি আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে বর্ণনায় 'বিচারকের দন্ড' শিরোনামে ঘটনাটি শেয়ার করা হয়েছে। বর্ণনায় বলা হচ্ছে, আমেরিকায় একটি দোকান থেকে এক কিশোর তার অসুস্থ মায়ের জন্য রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এবং বিচারক তার কাহিনী শুনে তার অপরাধ ক্ষমা করে দেন। সেই সাথে দাবি করা হচ্ছে যে দোকান ক্ষুধার্ত ছেলেটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে সেই দোকানকে এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। একই বর্ণনাসহ ছবিটি ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি একই ঘটনার বলে মনে হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ঘটনার সাথে যুক্ত করা ছবিটি ভিন্ন ঘটনার। ছবিতে দেখতে পাওয়া কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কিশোর রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েনি।
প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসনভিল শহরে দুই বছর বয়সী বৈপিত্রেয় (একই মা কিন্তু বাবা ভিন্ন) ভাইকে হত্যার অভিযোগে ওই কিশোরকে গ্রেফতার হয় এবং পরে সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তও হয়। তবে বুম বাংলাদেশ সঙ্গত কারণেই ওই পোস্টে এই ছবির সাথে বর্ণনা করা ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করেনি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় ফেসবুকে ছড়ানো এই ছবিটিই ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্থানীয় গণমাধ্যম jacksonville.com এ পূর্ববর্তী বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে জ্যাকভিল শহরে পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে 'A look at Jacksonville domestic violence homicides in 2011' শিরোনামে একটি সালতামামি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ছবিসহ প্রকাশিত অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে তৃতীয় ঘটনাটি আলোচ্য ছবিটি সহ বর্ণনা করা হয়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, ২০১১ সালের ২ জুন ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিল শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খুনি হিসেবে ১২ বছরের ক্রিস্টিয়ান ওয়ান ফার্নান্দেজকে ২ বছর বয়সী তার বৈপিত্রেয় ভাই ডেভিড গলরাগাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
এছাড়াও ডেভিড গলরাগার মৃত্যুর ঘটনাটি ২০১১ সালের মার্চের বলে বর্ণনা করা হয়। তৎকালে ঘটনাটি পুরো যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত হয়। অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমেও ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা যায়। ফক্সনিউজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
১২ বছরের ফার্নান্দেজ কিশোর আইনে ২০১৩ সালে সাজা পাবার পর ২০১৮ সালে ১৯ বছর বয়সে তাকে মুক্তি দেয়ার কথা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানা যায়। দেখুন এখানে ও এখানে।
বাংলাদেশে ফেসবুকে প্রচার করা দাবির মতো অন্যান্য দেশেও সামিজক মাধ্যমে একই দাবিতে ছবিটি ছড়িড়ে পড়ে। এরআগে বার্তা সংস্থা এএফপি এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সুতরাং ছোট ভাইকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার ও পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্ত এক কিশোরের ছবির সাথে ভিন্ন এক মানবিক ঘটনা জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।