এটি কোনো ভয়ঙ্কর প্রাণী ধরা পড়ার ভিডিও নয়
ভিডিওটি গাইবান্ধার নয় বরং দিনাজপুরের সাঁওতালদের 'পিকনিকের উদ্দেশ্যে' শিয়াল শিকারের বলে নিশ্চিত হয়েছে বুম বাংলাদেশ।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, অবশেষে ধরা পড়ল গাইবান্ধার তালুক জমিরার সেই ভয়ঙ্কর প্রাণীটি। দেখুন এমন দুটি পোস্ট এখানে এবং এখানে।
গত ৩১ অক্টোবর 'আমাদের বাড়ি গাইবান্ধা আমরা আল্লাহর বান্দা' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, 'অবশেষে ধরা পরল গাইবান্ধার তালুক জামিরা সেই ভয়ঙ্কর প্রাণীটি এখন দেখার বিষয় এই প্রাণীটি সেই প্রাণী কিনা'। অর্থাৎ সম্প্রতি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় 'অচেনা' এক প্রাণীর হামলায় বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। দাবি করা হচ্ছে, ধরা পড়েছে সেই 'অচেনা' ভয়ঙ্কর প্রাণীটি। ৩ মিনিটের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, বেশ কিছু লোক একটি প্রাণীকে পিটিয়ে মারছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি পুরোনো এবং গাইবান্ধায় দেখতে পাওয়া বহুল আলোচিত 'অচেনা ভয়ঙ্কর' প্রাণীর সাথে সম্পর্কিত নয়। বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে আসল ভিডিওটি খুঁজে পেয়েছে বুম বাংলাদেশ। ২০২১ সালের ৯ জুন 'সাঁওতালরা যেভাবে শিয়াল ধরে! The way Santals catch foxes' শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করা হয় 'iam zakir' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে। ৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের এই ইউটিউব ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, লোকালয়ে একটি জমিতে চারপাশ থেকে বেশ কিছু লোক একটি শিয়ালকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। দেখুন ভিডিওটিতে সেই প্রাণীটির স্ক্রিনশট--
তবে ভিডিওটি এই ইউটিউব চ্যানেলের নিজস্ব ভিডিও কিনা সে ব্যাপারে কিছুই উক্ত ভিডিওতে উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে বুম বাংলাদেশ আরো খোঁজ করে উক্ত চ্যানেল (iam zakir) এর এডমিন মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। দিনাজপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন, ভিডিওটি তিনি রেকর্ড করেছেন। তবে ঠিক কবে ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন তার কোনো নির্দিষ্ট দিন তারিখ তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, একদিন দিনাজপুরে তার গ্রামের সাঁওতালরা শিকারে বের হলে তিনি তাদের পিছু নিয়ে ভিডিওটি ধারণ করেন। সাঁওতালরা তখন জাকিরকে জানিয়েছিল, তারা মূলত 'পিকনিক' করার উদ্দেশ্যে শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকারে বের হয়েছেন। অর্থাৎ জুন মাসে আপলোড হওয়া এই ভিডিওটির সাথে গাইবান্ধার 'অচেনা ভয়ঙ্কর' প্রাণী ধরা পড়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন সম্পূর্ণ ভিডিওটি--
উল্লেখ্য, গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে গাইবান্ধার বেশকিছু এলাকায় এক 'অচেনা' প্রাণীর আতঙ্ক দেখা দেয়। প্রাণীটির হামলায় একজন ইমামের মৃত্যু হয়, আহত হন আরো অন্তত ১০ জন। তবে পরবর্তীতে গাইবান্ধার আলোচিত সেই 'অচেনা ভয়ঙ্কর' প্রাণীটিকে চিহ্নিত করতে সমর্থ হয় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। গত ৪ নভেম্বর বিডিনিউজ২৪ ডটকমে 'পলাশবাড়ীর সেই অচেনা প্রাণীটি 'শিয়াল' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ দলের বরাত দিয়ে বলা হয়, "আমরা অনেকটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি। এ সব এলাকায় ছোট ছোট শিয়াল ও খেঁকশিয়ালের অবাধ বিচরণ রয়েছে। রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা ছোট প্রকৃতির শিয়াল বা খেঁকশিয়াল।" দেখুন খবরটি--
আরো দুটি দেখুন এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ গত জুন মাসে দিনাজপুরে সাঁওতালদের শিয়াল শিকারের পুরোনো ভিডিওকে গাইবান্ধায় 'ভয়ঙ্কর' প্রাণী ধরার ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে যা বিভ্রান্তিকর।