চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বলে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন ঘটনার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, এটি চীনে সামাজিক মাধ্যমে পুলিশকে বাজে মন্তব্যকারী এক ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ছবির একটি কোলাজ দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি চীনা প্রশাসন কর্তৃক দেশটির একজন উইঘুর মুসলিমকে নির্যাতনের ছবি। দেখুন এমন কিছু পোস্টের লিংক এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৮ জুন "হিকমাহ - Hikmah" নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে 'আলোর ভুবন' নামের আইডি থেকে দুটি ছবির একটি কোলাজ পোস্ট করা হয়। যাতে দাবি করা হয়, ছবিটি চীনের এক উইঘুর মুসলিমের যাকে একটি বিশেষ চেয়ারে তার হাত-পা বেঁধে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যেন তিনি তাঁর ধর্ম পালন করতে না পারেন। অর্থাৎ পোস্টের দাবি অনুযায়ী, একজন উইঘুর মুসলিমকে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ থেকে দূরে রাখতে তাকে এভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
ছবিটি চীনের উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বলে যে দাবি করা হচ্ছে, যাচাই করে এর পক্ষে কোন প্রমাণ পায়নি বুম বাংলাদেশ। প্রথমত, বর্ণনামূলক এই পোস্টের সাথে ঘটনাটির কোন সুত্র উল্লেখ নেই। অর্থাৎ উইঘুর মুসলিমের উপর অত্যাচার হচ্ছে বলে দাবির সমর্থনে সেই পোস্টে কোনো তথ্য-প্রমান দেয়া হয়নি।
দ্বিতীয়ত, রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে উক্ত ছবিটির একটি ভিডিও ভার্সন পাওয়া গেছে। গত ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক একটি অনলাইন পোর্টাল gript.ie -এ উক্ত ভিডিওটি বর্ণনাসহ পাওয়া গেছে। সেখানে 'WATCH: Police interrogate Chinese man for criticism on social media' শিরোনামে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চীনের সামাজিক মাধ্যমে সেদেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর সমালোচনা করায় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ভিডিও এটি। দেখুন--
খবরটিতে একটি টুইটার হ্যান্ডেলের লিংক জুড়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে এই ভিডিওটি আপলোড করা আছে। দেখুন সেই টুইটার হ্যান্ডেলটি--
China spies on social media conversations. Then they bring dissidents in for a real-life chat. I'd say we're AT LEAST five years away from that over here, so no worries. pic.twitter.com/HjXzqsgr8S
— Ezra Levant 🍁 (@ezralevant) December 1, 2019
এছাড়া, ২০১৯ সালের একই দিনে 'summit.news' নামের আরেকটি অনলাইন পোর্টালে একই বর্ণনাসহ ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। দেখুন--
তবে টুইটারে ভিডিওটি ২০১৮ সালেও পোস্ট হতে দেখা গেছে। চাইনিজ ভাষায় লেখা সেই পোস্টের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, একজন মদ্যপ ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করার ভিডিও এটি। দেখুন সেই টুইটার হ্যান্ডেল--
酒后在微信上讲警察坏话,被抓了,在中国,警察不管工作做的好不好都是不能骂的。 pic.twitter.com/IGCg7ECXxc
— 李少明 (@dakache01) July 30, 2018
তাছাড়া, ভিডিওটি ২০১৯ সালে একাধিক ইউটিউব চ্যানেলেও আপলোড করা হয়। 'Himalaya International Workstation' নামের একটি চ্যানেলে সেই বছরের ৫ ডিসেম্বর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এই ভিডিওটি সাবটাইটেলসহ আপলোড করা হয়েছে। যার ইংরেজি টাইটেল থেকে জানা যায়, চীনের জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম উইচ্যাট ও কিউকিউ'র একটি গ্রুপে ট্রাফিক পুলিশকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার অপরাধে তাকে আটক করা হয়েছে। দেখুন সেই ভিডিও--
সাব-টাইটেলের পাশাপাশি ভিডিওটির প্রথমাংশে করা জিজ্ঞাসাবাদের নির্ভুল বঙ্গানুবাদ করার স্বার্থে চাইনিজ-বাংলা উভয় ভাষার অনুবাদকের সহায়তাও নিয়েছে বুম বাংলাদেশ। ভিডিওতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আটক ব্যক্তিটির জবাব এরকম-
নাম কি? -লুহুয়া।
তুমি কি জানো তোমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে? -জানি, আমি দুঃখিত"।
কেন দুঃখিত? -আমি একটু বেশি মদ পান করে মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম এবং তাই আজেবাজে বলেছি।
পেশা কি? -নির্দিষ্ট কিছু না। আমার বাবার পাশে আমি বাড়িতেই থাকি।
আচ্ছা তিনি অসুস্থ। কেন উইচ্যাট ও কিউকিউ'তে পুলিশের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছিলে? কখন সেটা? -গতকাল।
গতকাল কখন? -রাত ন'টার দিকে।
এছাড়াও ওই ব্যক্তি কোন ছবিতে কোন গ্রুপে মন্তব্য করেছে, ওই গ্রুপে কতজন মেম্বার আছে এ নিয়ে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
অর্থাৎ এই আলাপচারিতায় বিষয়টি স্পষ্ট যে ভিডিওটি উইঘুর মুসলিম নির্যাতন সম্পর্কিত কোনো ঘটনার নয়। বরং এটি চীনা পুলিশকে লক্ষ্য করে দেশটির সামাজিক মাধ্যমে অপ্রীতিকর মন্তব্যকারী ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য।
এছাড়া এরকম আরেকটি ভিডিও দেখুন--
উপরন্তু বিভিন্ন কিওয়ার্ডের মাধ্যমে সার্চ করেও উক্ত ভিডিওটির সাথে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
অতএব অন্তত চার বছর পুরোনো ভিন্ন একটি ঘটনার ভিডিওকে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।