ছবিগুলো ভারতের অসুস্থ শিশু মানাসভি'র
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, মানাসভি'র ছবি ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া পোস্টগুলো প্রতারণাপূর্ণ ও এসবে দেয়া তথ্য সমূহ ভুয়া।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছবিসহ এক অসুস্থ শিশুর জন্য আর্থিক সাহায্যের একটি আবেদন বেশ কিছু গ্রুপ এবং পেজ থেকে পোস্ট করা হচ্ছে। দেখুন কিছু লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৯ নভেম্বর 'নকশী কাথার মাঠ { NoksHii kaThaR MaTH }' নামের ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে এক শিশু ও শিশুসহ মায়ের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়। সেসব পোস্টে বলা হয়, 'তাসমিয়া আক্তার' নামের এক শিশুর লিভারের ৯৫ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। আরো উল্লেখ করা হয়, অসুস্থ শিশু তাসমিয়া এখন পঞ্চগড়ের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়া পোস্টের নিচের দিকে মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ ও রকেটের হিসাব খোলা বেশ কিছু মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়। দেখুন এমন একটি পোস্ট এখানে--
এছাড়া সেই পোস্টে উল্লেখিত ছবিগুলো একসাথে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিসহ সাহায্যের আবেদন করা এই পোস্টটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, পোস্টের সাথে যুক্ত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, সেগুলো ভারতের এক মা ও তাঁর অসুস্থ শিশুকন্যার। ভারতে অসহায় মানুষদের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান 'মিলাপ' এর ওয়েবসাইটে এই ছবিগুলো প্রথম পোস্ট করে অর্থ সাহায্যের আহ্বান করা হয়েছিল। সেই সাহায্যের আবেদনে দাবি করা হয় ৭ মাস বয়সী মানাসভি (Manasvi Mahesh Tembhurne) নামের কন্যাশিশুটি লিভারের জটিল রোগে ভুগছে। তাঁর মায়ের নাম নীলকমল এবং রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে ১৬ লাখ ভারতীয় রুপি দরকার। দেখুন সেই ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট--
সেই ওয়েবসাইটে সেই শিশুর মেডিকেল রিপোর্টও উল্লেখ করা হয়। দেখুন সেই ওয়েবসাইটের লিংক এখানে।
এদিকে মিলাপ এর ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টেও সেই ছবিগুলো পোস্ট করে সাহায্যের আহবান জানানো হয়। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর পোস্ট করা সেই টুইটটি দেখুন--
#MilaapSuccess Baby Manasvi's fight against a deadly disease came to an end with a successful liver transplant! Thanks to @Its_Badshah and 1378 generous supporters, Manasvi can look forward to a pain-free life. Follow her #SuccessStory at https://t.co/YdIMbtNHed#ThankYouDonors pic.twitter.com/weWPVGPSIP
— Milaap (@milaapdotorg) November 7, 2019
এছাড়া 'মিলাপ' এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও সেই ছবিসহ একই তথ্য পাওয়া যায় ২০১৮ সালের ২০ জুন এর একটি পোস্টে। দেখুন--
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে সম্প্রতি ভাইরাল পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, অসুস্থ শিশু তাসমিয়া আক্তার পঞ্চগড় জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। অথচ পঞ্চগড়ে কোনো মেডিকেল কলেজই নেই। বরং পঞ্চগড়ে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্যে নানাসময়ে আন্দোলন হয়েছে। দেখুন এ সংক্রান্ত দেশ রুপান্তরের একটি খবরের প্রতিবেদন এখানে--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
এদিকে বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে উল্লেখকৃত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে নয়, মূলত কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। দেখুন তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এখানে।
তবে 'তাসমিয়া আক্তার' নামের লিভারের অসুখে আক্রান্ত কোনো শিশু আছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি বুম বাংলাদেশ।
এছাড়া বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম 'আজকের পত্রিকা' ভাইরাল এই পোস্টটিকে এরইমধ্যে 'প্রতারণামূলক' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পড়ুন তাদের রিপোর্ট এখানে।
অর্থাৎ ভারতের এক অসুস্থ শিশু ও শিশুসহ মায়ের ছবি বানোয়াট তথ্যসহ ফেসবুকে পোস্ট করে বাংলাদেশের এক অসুস্থ শিশুর বলে দাবি করা হচ্ছে এবং আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।