সিলেটের পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার পুরোনো খবর নতুন করে প্রচার
সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় বরখাস্ত এসআই আকবর লাপাত্তা হওয়ার খবরটি ২০২০ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে লিংক শেয়ার করে সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই পলাতক হওয়ার খবর শেয়ার করা হচ্ছে।। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ মে 'Actors' নামের ফেসবুক পেজ থেকে অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে লেখা হয়, "পুলিশ ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যা: অভিযুক্ত এসআই পলাতক!"। স্ক্রিনশট দেখুন--
হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের খবরটিতে ডেটলাইন ২০২২ সালের ১৮ মে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবরণে লেখা হয়েছে, "চাঁদা না পেয়ে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া মঙ্গলবার এ মামলার তদন্তভার পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।" ফলে প্রকাশের তারিখ ও বিবরণ দেখে খবরটি পাঠকের কাছে সাম্প্রতিক বলে মনে হতে পারে। অনলাইন পোর্টালের খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি দুই বছর পুরোনো। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান নামের যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়ার লাপাত্তা হওয়ার খবরকে সাম্প্রতিক হিসাবে প্রকাশ করা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালে।
কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, সংবাদমাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলো'র অনলাইন সংস্করণে 'পুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু: আসামি উল্লেখ না করে মামলা' শিরোনামে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর প্রকাশিত একটি খবরে লেখা হয়েছে, "সিলেটের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদের (৩৪) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। রোববার রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তবে মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এরপরের দিন অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ২৪ ডটকমে "রায়হান হত্যা: মামলা পিবিআইতে, লাপাত্তা এসআই আকবর" শিরোনামে আরেকটি খবর প্রকাশিত প্রকাশিত হয়, এতে বলা হয়--"সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলা পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে।..................এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অবশ্য মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। ঘটনার পর থেকে তিনি কর্মস্থল কোতোয়ালির বন্দরবাজার ফাঁড়িতে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে এসআই আকবর পলাতক রয়েছেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
দুটি খবর মিলিয়ে পাঠ করলে দেখা যায়, তৎকালে সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলা পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছিল এবং মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক ছিল। যা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক খবরের সাথে হুবহু মিলে যায়। অর্থাৎ সিলেটের রায়হান উদ্দিন হত্যার পুরোনো খবরকেই একাধিক সংবাদমাধ্যম থেকে কপি করে সাম্প্রতিক তারিখে প্রকাশ করা হচ্ছে এসব অনলাইন পোর্টালে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এই পলাতক ইনচার্জ এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁঞাকে সিলেটের কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ডোনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রায়হান হত্যা মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে বুম বাংলাদেশ পুনরায় সার্চ করার পর, গত ১১ মে দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে "সিলেটে রায়হান হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন স্ত্রী" শিরোনামে একটি খবর খুঁজে পায়। খবরে লেখা হয়েছে, "সিলেটে পুলিশের হেফাজতে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিমের আদালতে মামলার বাদী ও নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ সিলেটে রায়হান হত্যা পুরোনো খবরকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে নতুন করে প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে, যা বিভ্রান্তিকর।