'মুঘল আমলের সোনার হরফে লেখা কোরআনের সন্ধান লাভ' খবরটি পুরানো
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল, নতুন করে এর প্রচার বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজে অখ্যাত কিছু অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে, সোনার হরফে লেখা সম্রাট আকবরের আমলের একটি কোরআন শরীফের কপি ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচারের সময় উদ্ধার করার খবর প্রচার করা হচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর 'Azmain Hosain' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে লেখা হয়, "ভারতে পাওয়া গেছে স্বর্ণে লেখা মুঘল আমলের কুরআন"।
হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটিতে বলা হয়--
"ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজস্থান রাজ্য থেকে স্বর্ণে লেখা মুঘল সম্রাট আকবরের আমলের একটি পবিত্র কুরআন বাংলাদেশে পাচার করার সময় রাজস্থান পুলিশের হাতে এক ব্যক্তি আটক হয়। আনুমানিক ১৬ কোটি রুপি দামের কুরআনের এই কপিটি বাংলাদেশে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল। জনা যায়, ওই কুরআনটি গত বছর ডাকাতি করে ছিনিয়ে নেয় তিন ব্যক্তি। দু'জনকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বাকি ১ জনকে ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কুরআনসহ গ্রেফতার করা হয়।"
অর্থাৎ খবরটিতে ডেটলাইন উল্লেখ করা না থাকলেও বর্ণনায় স্পষ্টভাবে '১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের' কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে খবরটি পড়ে এবং ফেসবুকের পোস্টের সময় দেখে এটি চলতি বছর কিংবা সাম্প্রতিক বলে মনে হতে পারে।।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে খবরটি ভারত এবং বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বিবিসি বাংলায় "সোনায় লেখা কুরআন উদ্ধার ভারতে, মুঘল সম্রাট আকবরের আমলের ধর্মগ্রন্থটি পাচার হচ্ছিলো বাংলাদেশে' শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়-
"ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানে উদ্ধার করা হয়েছে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলের একটি কুরআন, যেটি সোনায় লেখা বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে। আনুমানিক ১৬ কোটি রুপির দামের এই কুরআনটি বাংলাদেশে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে রাজস্থান পুলিশ। তবে সেটি বাংলাদেশে কার কাছে পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তা জানতে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জেরা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১,০১৪ পাতার ওই কুরআনটি গত বছর ডাকাতি করে ছিনিয়ে নেয় তিন ব্যক্তি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দু'জনকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আর বৃহস্পতিবার কুরআনসহ গ্রেফতার করা হয় তৃতীয় ব্যক্তিকে।"
বিবিসি বাংলার খবরটি দেখুন এখানে। পাশাপাশি সার্চ করার পর ভারতের একাধিক গনমাধ্যমেও একই তারিখে আলোচ্য সংবাদটি প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি "Mughal era gold-lettered Quran recovered from thieves in Rajasthan" শিরোনামে বিবিসি অনুরূপ বিবরণে খবরটি প্রকাশ করে। অর্থাৎ খবরটি দেড় বছর পুরানো। ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত আরো কিছু খবর দেখুন এখানে ও এখানে।
অর্থাৎ ২০২০ সালের শুরুর দিকে ঐতিহাসিক একটি কোরআন চুরি ও দুর্বৃত্তদের আটক করার খবরকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে নতুন ডেটলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।