আফগানিস্তানের পুরোনো খবর নতুন করে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে গত বছর পুরুষ দর্জিদেরকে নারীদের মাপ নিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি আফগানিস্তানে নারীদের পোশাক তৈরিতে পুরুষ দর্জিদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, ও এখানে।
গত ১ এপ্রিল অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'ঢাকা পোস্ট' এর ভেরিফাইড পেজ থেকে এ সংক্রান্ত একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ফটোকার্ডে উল্লেখ করা হয়, "আফগানিস্তানে নারীদের পোশাক বানাতে পারবে না পুরুষ দর্জি"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
গত এপ্রিলের শুরুর দিকে এ বিষয়ে অনলাইন সংস্করণে সংবাদ প্রকাশ করেছে ঢাকা পোস্ট, ভোরের কাগজ, বিডি ২৪ রিপোর্ট সহ অনেকে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত পুরো আফগানিস্তানে নয় বরং শুধু দেশটির পারওয়ান প্রদেশে পুরুষ দর্জিদেরকে নারীদের শরীরের মাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত পুরুষ দর্জি নারীদের পোশাক বানাতে পারবে না, সেটিও সঠিক নয়। বরং দর্জির দোকানের পক্ষে কোনো নারী পোশাক বানাতে আসা নারীদের শরীরের মাপ নেবেন, তারপর তা পুরুষ দর্জিরা বানাতে পারবেন। তৃতীয়ত খবরটি সাম্প্রতিক নয় বরং গত বছরের মার্চ মাসের ঘটনা।
ঢাকা পোস্ট, ভোরের কাগজ ও বিডি ২৪ রিপোর্ট এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় তারা খবরটি নিয়েছেন আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম 'তোলো নিউজ' থেকে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ এর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ "Male Tailors Claim Restrictions on Making Clothes for Women" শিরোনামের তোলো নিউজের প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ তোলো নিউজের প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের যা একবছর পরে এসে ঢাকা পোস্ট, ভোরের কাগজ ও বিডি ২৪ রিপোর্ট সাম্প্রতিক খবর হিসেবে প্রকাশ করেছে।
সার্চ করে আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশ ব্যতীত অন্য কোনো প্রদেশে নারীদের কাপড় তৈরি করার (মাপ নেওয়া সহ) কোনো নির্দেশনার খবর পাওয়া যায়নি।
তোলো নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চরিকারে বেশ কয়েকজন পুরুষ দর্জি জানিয়েছেন, তারা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সদাচার প্রসার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মৌখিক আদেশ পেয়েছেন এবং তাদের মহিলাদের জন্য পোশাক তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। পারওয়ান টেইলার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের মতে, নিষেধাজ্ঞার ফলে এই প্রদেশের অনেক দর্জি কর্মসংস্থান হারিয়েছেন এবং কেউ কেউ দেশ ছেড়ে ইরানে চলে গেছেন।
তবে একই প্রতিবেদনে বলা হয়, পারওয়ানের স্থানীয় কর্মকর্তারা পোশাক তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন। পারওয়ানের গভর্নরের মুখপাত্র হিকমতুল্লাহ শামীম বলেন, পুরুষ দর্জিদের পোশাক তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং পোষাক তৈরিতে কোন বাধা নেই, শুধু দর্জির দোকানে আসা নারীদের শরীরের মাপ নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ দর্জিদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিকে তোলো নিউজের প্রতিবেদনের শিরোনামে নারীদের পোষাক তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি 'দর্জিদের দাবি' হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আলোচ্য গণমাধ্যমগুলো সিদ্ধান্তমূলক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যদিও সংবাদটিতে স্থানীয় দর্জি, দর্জিদের প্রতিনিধি এবং পারওয়ান প্রদেশের কর্মকর্তা ও গভর্নরের মুখপাত্রের বক্তব্য পরষ্পর সাংঘর্ষিক।
এ সম্পর্কে আফগানিস্তানের ফ্যাক্ট-চেক সংস্থা 'আফগানফ্যাক্ট' এর কাছে জানতে চাইলে তারা বুম বাংলাদেশকে জানান, পারওয়ান প্রদেশে কেবলমাত্র নারীদের পোশাকের মাপ পুরুষ দর্জিদের নেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, নারীদের কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে নয়।
অর্থাৎ আফগানিস্তানের একটি প্রদেশে পুরুষ দর্জিদের নারীদের শরীরের মাপ নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, পুরুষ দর্জিরা নারীদের পোশাক বানাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নারীদের শরীরের মাপ নারী (দর্জি বা সহযোগি) কর্তৃক নিয়ে তারপর পুরুষ দর্জিরা নারীদের কাপড় তৈরি করতে পারবেন।
সুতরাং সম্প্রতি আফগানিস্তানে পুরুষ দর্জিদেরকে নারীদের পোশাক তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।