এলপি গ্যাসের দাম কমানো নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০২০ সালে ভারতে জ্বালানি গ্যাসের দাম কমার একটি খবরটিকে নতুন করে প্রকাশ করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
রান্না করার জ্বালানি গ্যাস অর্থাৎ এলপি গ্যাসের দাম কমে যাবার একটি খবর সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের বরাতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। খবরটি একাধিক পেজ ও আইডি থেকে অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে পোস্ট করা হচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর 'সংবাদ ২৪ ঘন্টা' নামের একটি পেজ থেকে অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে বলা হয়, ''রান্নার গ্যাসের দাম কমে গেল এক ধাক্কায়! মধ্যবিত্তদের মাঝে স্বস্থির নিঃশ্বাস"।
হুবহু একই শিরোনামে চলতি বছরের ২১ জুন প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে বলা হয়--
''কমলো ভর্তুকিহীন এলপিজি গ্যাসের দাম। ১ মে থেকে চারটি শহরে কমলো এলপিজি গ্যাসের দাম। ইন্ডিয়ান অয়েলের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই চারটি শহরে এই নতুন দাম বরাদ্দ হয়েছে। আগে কলকাতায় এক একটি রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৭৭৪.৫০ টাকা। কিন্তু প্রায় ১৯০ টাকা কমে এখন সেই দাম হয়েছে ৫৮৪.৫০ টাকা। দিল্লিতে ভর্তুকিহীন এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ছিল ৭৪৪ টাকা। এখন সেই দাম কমে হয়েছে ৫৮১.৫০ টাকা৷ চেন্নাইয়ে ৭৬১.৫০ টাকা দামের গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমে হয়েছে ৫৬৯.৫০ টাকা। মুম্বইয়ে সিলিন্ডারের দাম ছিল ৭১৪.৫০ টাকা। এখন সেখানে সিলিন্ডারের নতুন দাম হল ৫৭৯ টাকা। মধ্যবিত্তের হেঁসেলে স্বস্তি দিয়ে কলকাতায় রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু কমেছে ১৯০ টাকা করে।............।" অর্থাৎ, প্রকাশের তারিখ ও বিবরণ দেখে খবরটি গত মে মাসের মনে হতে পারে। পাশাপাশি, খবরটি যে ভারতের সেটিও শিরোনামে উল্লেখ করা হয়নি।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে খবরটি বিভ্রান্তিকর।
'কী-ওয়ার্ড' দিয়ে সার্চ করে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া খবরটি ১ মে ২০২০ সালের অর্থাৎ গত বছরের এবং বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ভারতে লকডাউন চলাকালে জ্বালানি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ২০২০ সালের ১ মে থেকে ভর্তুকিহীন এলপি গ্যাসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০২০ সালের ১ মে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম এনডিটিভি বাংলা ভার্সনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়- ''শহর কলকাতায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু দাম (LPG Cylinder Price) আগে ছিল ৭৭৪.৫০ টাকা। এখন তার থেকে ১৯০ টাকা কমে নয়া দাম হল ৫৮৪.৫০ টাকা।" এনডিটিভি এর এ সংক্রান্ত খবরটি দেখুন এখানে।
পরবর্তিতে ২০২০ সালের মে মাসের পর কোলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দফায় দফায় গ্যাসের দাম আগের থেকে বাড়ানোও হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে কোলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে। অনলাইন গণমাধ্যম এবিপি বাংলা ও নিউজ১৮ বাংলা-এ সংক্রান্ত খবর দেখুন এখানে ও এখানে। এবিপি বাংলার খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন-
উল্লেখ্য বাংলাদেশেও সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো অনলাইনে গত ৩১ আগস্ট " ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম বেড়ে ১০৩৩ টাকা" শিরোনামে খবরটিতে বলা হয়-
"দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৩ টাকা করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
আর উৎপাদন পর্যায়ে ব্যয় পরিবর্তন না হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই থাকছে। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির নতুন দাম প্রতি লিটার ৫০ টাকা ৫৬ পয়সা। আগে এটি ছিল ৪৮ টাকা ৭১ পয়সা। আজ মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।"
সুতরাং এক বছর আগের ভারতের একটি পুরোনো সংবাদমূল্যহীন খবরকে নতুন তারিখে বাংলাদেশে প্রকাশ করা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালগুলোতে, যা বিভ্রান্তিকর।