ছবিতে দৃশ্যমান আহত কিশোর ইয়েমেনের, ঘটনাটি ২০১৯ সালের
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পিতার আঘাতে জখম ইয়েমেনি এই কিশোরকে বাংলাদেশি ও যশোরে শিক্ষক দ্বারা নির্যাতিত বলে ভুয়া দাবি করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ছবির একটি কোলাজ দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, যশোর শার্শা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান সাগরকে পিটিয়ে জখম করেছে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম। দেখুন এমন কয়েকটি পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গতকাল ৩০ জানুয়ারি 'ডঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা' নামের ফেসবুক পেজ থেকে শরীরে বেত্রাঘাতের জখম হওয়া শিশুর দুটি ছবির কোলাজ পোস্ট করে এমন দাবি করা হয়। বিস্তারিত দেখুন স্ক্রিনশটে--
এছাড়া একাধিক অনলাইনে পোর্টালে একই ছবিসহ যশোরে শার্শায় নবম শ্রেণীর ছাত্রকে শিক্ষক কর্তৃক পিটিয়ে আহত করার খবর প্রকাশিত হয়। দেখুন--
খবরটির আর্কাইভ পড়ুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভাইরাল পোস্টগুলোর ছবি দুটি বাংলাদেশি কোন কিশোরের নয়। এছাড়া শিক্ষক কর্তৃক পিটিয়ে আহত করার খবরটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রথমত, রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে ছবিগুলো ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ইয়েমেনভিত্তিক একাধিক অনলাইন পোর্টালের একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইয়েমেনের আল মাহভিত শহরে শামিক রশিদ আল কাহিলি নামক ১৪ বছর বয়সী কিশোরের উপর শারিরীক অত্যাচার চালায় তার পিতা। পরবর্তীতে পুলিশ সেই পিতা রশিদ মোহাম্মদ আল কাহিলিকে গ্রেফতার করে। দেখুন--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
এরকম আরেকটি প্রতিবেদন দেখুন--
এ প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। এরকম আরেকটি প্রতিবেদন পড়ুন ইয়েমেননাওনিউজ ডটকমে। পরবর্তীতে ইয়েমেনের নিরাপত্তা বাহিনীর ওয়েবসাইটে সে নির্যাতনকারী পিতাকে গ্রেফতার করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ৫ অক্টোবর, ২০২০ এ। দেখুন সেই বিজ্ঞপ্তি এখানে।
অর্থাৎ ছবিগুলো ২০২০ সালে ইয়েমেনি এক শিশুর যাকে তার পিতা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিল, বাংলাদেশি কোনো কিশোরের নয়।
অপরদিকে আরো বিস্তারিত সার্চ করে দেখা গেছে, যশোরের শার্শা উপজেলায় মেহেদী হাসান সাগর (১৫) নামের এক নবম শ্রেনির ছাত্রকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক পিটিয়ে আহত করার খবর প্রচারিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। 'স্কুল ড্রেস না পরায় ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন শিক্ষক' ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইনে প্রকাশিত সে খবরে আরো বলা হয়, এই ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দেখুন--
একই খবর বার্তা সংস্থা ইউএনবিতেও প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের একই দিনে। পড়ুন এখানে।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খবরটি একাত্তর টিভি'র ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশ করা হয়েছিল সেখানে আহত সাগরকে দেখা যাচ্ছে। দেখুন ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট--
ভিডিওটি দেখুন এখানে। অর্থাৎ যশোরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাটি ২০১৯ সালের।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার ইয়েমেনি এক শিশুর ছবি ব্যবহার করে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র নিপীড়নের পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক খবর হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।