নড়াইলের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জাহাঙ্গীর নামে কেউ গ্রেফতার হয়নি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, নড়াইলে নবীজিকে কটুক্তির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আকাশ সাহার ফেসবুক আইডিটি আকাশ সাহা নিজেই চালাতেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একজন ব্যক্তির ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, নড়াইলের সাহা পাড়ায় আকাশ সাহার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারী জাহাঙ্গীর ইসলামকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ জুলাই '🕉️🙏🚩জয় শ্রী তুলসী বৃন্দাবন🚩 🕉️🙏' নামের একটি পাবলিক গ্রুপে 'JoyRadha Madov Joy' নামের একটি আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ''নড়াইলের সাহা পাড়ায় আকাশ সাহার নামে ভূয়া আইডি খুলে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারী জাহাঙ্গীর ইসলামকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নড়াইলের সাহাপাড়ার মন্দির বাড়িঘর যারা পুড়িয়ে দিয়েছেন তারা এখন কি জবাব দিবেন..!!! এই ঘৃণিত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। প্রতিনিয়ত এভাবেই গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের বাড়িঘর মন্দির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে এরা। আর কিছু শান্তিবাহিনীর লোক আছে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই গুজবে কান দিয়ে অসহায় হিন্দু বাড়িঘরে লুটপাট ভাঙচুর করে। এই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে মানুষের সামনে তুলে ধরুন নিজের পবিত্র ধর্মকে অপমান করে অন্যকে ফাঁসাতে চেষ্টা করে এরা।কোন ধর্মের মানুষ জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করবে না।'' পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, জাহাঙ্গীর নামের কোনো ব্যক্তিকে নড়াইলের দিঘলিয়ায় ঘটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। আকাশ সাহা নামের যে ফেসবুক আইডি থেকে মহানবীকে কটুক্তি করার জেরে নড়াইলের দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, ওই ফেসবুক আইডিটি আকাশ সাহা নামের এক তরুণ নিজেই চালাতেন।
আলোচ্য পোস্টের ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ১৮ জুলাই প্রকাশিত Channel24-এর ওয়েবসাইটে 'নড়াইলে তাণ্ডবের ঘটনায় অভিযুক্তরা তিনদিনের রিমান্ডে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে যুক্ত ছবিতে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দিঘলিয়া গ্রামের রাসেল মৃধা (৪৫), চরমাউলী গ্রামের কবীর কাজী (৪০), তালবাড়িয়া গ্রামের মো. সাঈদ শেখ (৫৫), বাটিকাবাড়ি গ্রামের রেজাউল শেখ (৪০) ও বয়রা গ্রামের মাসুম বিল্লাহ (৩০) নামের ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ আলোচ্য ছবির ব্যক্তি মূলত গ্রেফতার হওয়া পাঁচ ব্যক্তির ভিতরে একজন। গ্রেফতারদের তালিকায় জাহাঙ্গীর নামে কোনো ব্যক্তির নাম নেই।
এদিকে, গত ১৫ জুন নড়াইলের লোহাগড়ায় আকাশ সাহা নামে এক যুবক মহানবী (স) কে নিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে কটুক্তি করলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে। এই ঘটনায় ১৬ জুন রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আকাশ সাহাকে। ১৭ জুলাই Dhaka Post-এ 'নড়াইলের ঘটনায় কলেজছাত্র আকাশ তিন দিনের রিমান্ডে' শিরোনামে করা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অনলাইন সংবাদ পোর্টাল banglanews24.comও এই ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আবার গত ২৭ জুলাই 'প্রথম আলো'-র ওয়েবসাইটে 'কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে তরুণের জবানবন্দি' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আকাশ সাহা নামে আইডি খুলে জাহাঙ্গীর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ওই কটূক্তিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন এবং গ্রেফতার হয়েছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে ২৬ জুলাই দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে আকাশ সাহা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জবানবন্দিতে নবীজিকে কটূক্তি করে পোস্ট করার বিষয়টি আকাশ সাহা স্বীকার করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নড়াইলের জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। স্ক্রিনশট দেখুন---
অর্থ্যাৎ নড়াইলের দিঘলিয়ায় ঘটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৫ আসামীর একজনকে জাহাঙ্গীর বলে দাবি করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, জাহাঙ্গীর নামের ওই ব্যক্তি আকাশ সাহার নামে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট খুলে উস্কানিমূলক পোস্ট করে গ্রেফতার হয়েছেন, যা ভিত্তিহীন। মূলত জাহাঙ্গীর নামের কোন ব্যক্তি ওই ঘটনায় গ্রেফতার হননি এবং আকাশ সাহা নামের এক তরুণ গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে গেছেন, যিনি উস্কানিমূলক পোস্টের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছেন।
সুতরাং জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে আকাশ সাহার নামে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট খুলে নবীজিকে কটূক্তি করে পোস্ট করা এবং গ্রেফতার হওয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন।