হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোর্স করাচ্ছে না
কুমিল্লার চান্দিনায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, কুমিল্লার চান্দিনায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোর্স করাচ্ছেন হিন্দু প্রশিক্ষকেরা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ মে 'Chintabad Niloy' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ব্যানারের ছবি যুক্ত ফটোকার্ড পোস্ট করে বলা হয়, "আজকাল ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোর্স করাচ্ছে হিন্দুরা"। ফটোকার্ডে লেখা রয়েছে, "ইমাম, মুয়াজ্জিনদের কোর্স। প্রধান অতিথি - ড. প্রাণ গোপাল দত্ত। বিশেষ অতিথি-তপন বকসী। সভাপতি - তাপস শীল।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় হিন্দু প্রশিক্ষকেরা ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোর্স করাচ্ছেন না। ছবিটি ইমাম মোয়াজ্জিনদের নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারের, যেখানে পদাধিকার বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটিতে এই তিনজন ব্যতীত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কুমিল্লা প্রতিনিধির সঞ্চালনায় বেশ কয়েকজন মাওলানা'সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
ব্যানারে উল্লেখ থাকতে দেখা যায়, ইমাম মুয়াজ্জিনদের ওরিয়েন্টশন কোর্স ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইমামদের ভূমিকা শীর্ষক অনুষ্ঠান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বকসী ও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস শীল।
ব্যানারে প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন এমন কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে আলোচ্য অনুষ্ঠান ও অতিথিদের নাম ব্যবহার করে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কুমিল্লার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম 'কুমিল্লার কাগজ' এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইমামদের ভূমিকা অসীম-- অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার সব মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিনদের ওরিয়েন্টশন কোর্স ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইমামদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেছেন, সকল ধর্ম ও বর্ণ বৈষম্য দূর করে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের ভূমিকা অসীম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, পৌর মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূঁইয়া, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা মজুমদার, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া আক্তার, চান্দিনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহাবুদ্দীন খাঁন। ইসলামী ফাউন্ডেশন চান্দিনা উপজেলা পরিদর্শক মাও. মাহবুবুর রহমান এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মাইজখার ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান, ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা নজির আহমেহ, মাওলানা মহিদুল্লাহ প্রমুখ। স্ক্রিনশট দেখুন--
কুমিল্লার কাগজের প্রতিবেদনটির প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বুম বাংলাদেশকে জানান, "ইমাম মুয়াজ্জিনদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন কোর্স ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তাদের ভূমিকা এই অনুষ্ঠানে পদাধিকার বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বকসী কেবল বক্তব্য প্রদান করেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এই প্রোগ্রামের সভাপতিত্ব করেন"।
অর্থাৎ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইমামদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় পদাধিকার বলে কুমিল্লার (৭ আসন) চান্দিনার এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রধান অতিথি, চান্দিনা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বকসী বিশেষ অতিথি ও সভাপতি হিসেবে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস শীল। তারা উক্ত কোর্সের প্রশিক্ষক হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
ব্যানারে নাম উল্লেখ না থাকলেও একই আলোচনা সভায় ইসলামী ফাউন্ডেশন চান্দিনা উপজেলা পরিদর্শক মাওলানা মাহবুবুর রহমান এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূঁইয়া, চান্দিনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহাবুদ্দীন খাঁন। ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান, ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা নজির আহমেহ, মাওলানা মহিদুল্লাহ।
অর্থাৎ ইমাম মোয়াজ্জিনদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কোর্স করায়নি।
সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোর্স করাচ্ছেন হিন্দু প্রশিক্ষকেরা' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।