কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছেন তা বলেননি মমতা
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, খণ্ডিত ভিডিওক্লিপ দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নামে ভুয়া দাবি প্রচারিত হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিওক্লিপ শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, বিদ্রোহী কবি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩০ আগস্ট 'Samit Kumar Roy' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যের একটি ভিডিওক্লিপ পোস্ট করে বলা হয়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন মহাভারত কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন।********** ভারতবর্ষ তথা সমগ্ৰ বিশ্ব "মহাভারত" সম্পর্কে অবগত, আমরা এতদিন যানতাম "মহাভারতের" রচয়িতা ছিলেন ... মহান ঋষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস এবং লিখেছিলেন স্বয়ং ভগবান গণেশ দেব।। ধরুন তর্কের খাতিরে এই থিয়োরিটাই মেনে নিলুম যে, স্রেফ লাইমলাইটে থাকবার জন্যই জেনেশুনে এসব ভুলভাল বলা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও কতটা নির্লজ্জ হতে হয় ভেবে দেখেছেন? বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যদি আজকে বেঁচে থাকতেন তাহলে মমতাকে কোলে বসিয়ে লিখে ফেলতেন চার বেদও..! আর মেন্টাল মুমতাজ বেগুন বলতেন, মহর্ষি কৃষ্ণ দৈপায়ণ বেদ ব্যাস কোন হরিদাস পাল হে..!" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ পোস্টটিতে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পবিত্রগ্রন্থ মহাভারতের লেখক।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছেন এমন কোনো বক্তব্য দেননি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্র সমাবেশে দেয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের ভিডিওর একটি খণ্ডিত অংশ প্রচার করে বিভ্রান্তিকরভাবে দাবি করা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জী বলেছেন কাজী নজরুল মহাভারত লিখেছেন।
আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে RNFNEWS.in নামে একটি ভারতীয় অনলাইন পোর্টালের নাম লেখা থাকতে দেখা যায়। সার্চ করে গত ৩১ আগস্ট RNF এর ফেসবুক পেজে পোস্টকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ''মহাভারত নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন', ছোট্ট ক্লিপে মুখ্যমন্ত্রীর নামে ছড়ানো হল 'ফেক নিউজ'। ঠিক কি বলেছিলেন? জেনে নিন #MamataBanerjee" ক্যাপশনে পোস্ট করা ওই ভিডিওটিতে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দেওয়া বক্তব্যের একটি আংশিক ক্লিপ বিভ্রান্তিকরভাবে ভাইরাল করা হচ্ছে। ওই পোস্টে আরো জানানো হয়, ভাইরাল দাবিগুলোতে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারতের লেখক। ওই ভিডিওটিতে মূখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ছড়ানো দাবিটি মিথ্যা বলেও জানানো হয়। ফেসবুক ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ৩১ আগস্ট RNF এর অনলাইন পোর্টালে '‘মহাভারত নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন’, ঠিক কি বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "নজরুল ইসলাম নাকি মহাভারত লিখেছেন। মমতার বলা সেই ছোট্ট একটি ভিডিও খুব করে শেয়ার করা হয়েছে নেটদুনিয়ায়। তবে আসলেই কি মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেছেন? ২৮ অগাস্ট ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলছিলেন, ‘বিবেকানন্দ পড়ুন ও জানুন, পঞ্চানন বর্মা পড়ুন ও জানুন, নজরুল পড়ুন ও জানুন, মহাভারত; নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন – বেদ-বেদান্ত বাইবেল-ত্রিপিটক, গ্রন্থ সাহেব-জেন্দা বেস্তা পড়ে যাও যতসব…।' মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি ভালো করে শুনলে বোঝা যাবে যে তিনি কখনোই বলতে চাননি মহাভারত এর রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম।" প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে "TMCP Foundation Day, 2023 | গান্ধী মূর্তির পাদদেশে, ২০২৩-এর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্র সমাবেশে" ক্যাপশনে একটি রেকর্ডেড লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ৩৮ মিনিট ২৮ সেকেন্ড থেকে ৩৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বক্তব্যে আলোচ্য অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ওই অংশে মমতা ব্যানার্জীকে ভারতের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা, সেই সংক্রান্ত বই এবং কয়েকজন ব্যক্তির উপরে জোর দিয়ে পড়া এবং জানার জন্য জোর দিতে দেখা যায়। তার উল্লেখিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে মহাভারতের উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু, মহাভারতের উল্লেখের পরপরই কাজী নজরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করায় আলোচ্য ক্লিপগুলোতে বিভ্রান্তিকরভাবে সেটা প্রচার করা হয়। মমতা ব্যানার্জীর ফেসবুক পেজের পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় "কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছেন" বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বরং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্র সমাবেশে ওই বক্তব্যে তার বক্তব্য ছিল ভিন্ন। এদিকে, আলোচ্য দাবিটি ছড়িয়ে পড়লে এনিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বুম লাইভ। ওই প্রতিবেদনেও বলা হয়, মমতা ব্যানার্জীর দেওয়া একটি বক্তব্যের অংশকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় "কাজী নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছেন" বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা বিভ্রান্তিকর।