শিশু তুবার ছবি দিয়ে প্রতারনাপূর্ণ সাহায্যের আবেদন
তুবার বাবা মারুফ হাসান জানিয়েছেন, গত ২১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুবা মারা যায়, পরে তারা আর সাহায্যের আবেদন করেননি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি শিশুর বেশ কিছু ছবি পোস্ট করে মানবিক সাহায্যের আবেদন জানানো হচ্ছে। ছবির শিশুকে কোথাও মুনতাহা আবার কোথাও ফাবিহা বলে দাবি করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টগুলোতে শিশুটির রোগ সম্পর্কেও একাধিক তথ্য দেয়া হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি 'Najnin Akter Happy' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিগুলো পোস্ট করে শিশুটিকে ফাবিহা দাবি করে বলা হয়, তার লিভার নষ্ট হয়ে গেছে। আবার 'Please Help' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৯ জানুয়ারি শিশুটির ছবি পোস্ট করে শিশুটি বিলিয়ারি এট্রেশিয়া নামক রোগে আক্রান্ত বলে জানানো হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিগুলো আলাদাভাবে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, মুনতাহা তুবা নামে একটি শিশুর অসুস্থতা এবং আর্থিক সহায়তার আবেদনটি সত্য হলেও এতে উল্লিখিত উভয় ফেসবুক পোস্টের বা অনুরূপ সাহায্যের আবেদনগুলো প্রতারনাপূর্ণ। কারণ, কোথাও শিশুটির পরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে আবার কোথাও প্রতারণার উদ্দেশ্যে শিশুটির জন্য সহায়তা পাঠানোর জন্য তার বাবা মারুফ হাসানের মূল বিকাশ নাম্বারটি পরিবর্তন করে প্রতারকদের বিকাশ নম্বর যুক্ত করা হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টের ছবিগুলো পৃথকভাবে রিভার্স ইমেজ ও পোস্টের কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চের পর, Maruf Hasan নামের একটি ফেসবুক আইডিতে শিশুটির পুরোনো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০২১ সালের ০৪ ডিসেম্বরে "একটি মানবিক আবেদন" শিরোনামে পোস্ট করা হয়েছে। ঐ পোস্ট থেকে জানা যায়, শিশুটির নাম মুনতাহা তুবা। শিশুটি বিলিয়ারি এট্রেশিয়া নামক রোগে আক্রান্ত ছিল।
মারুফ হাসানের আইডিতে অনুসন্ধানের পর, গত ২২ জানুয়ারি পোস্ট করা আরও একটি স্ট্যাটাস খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি জানান তার সন্তান মারা গেছেন।
বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মো. মারুফ হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ছবিগুলো তার সন্তান মুনতাহা তুবার। তিনি শিশুটির চিকিৎসার প্রমাণপত্রও পাঠান। মারুফ বুম বাংলাদেশকে বলেন, বিলিয়ারি এট্রেশিয়া নামক বিরল রোগে আক্রান্ত তুবার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট-এর জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর তিনি নিজের বিকাশ নম্বরসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। এই পোস্ট থেকেই কে বা কারা শিশুটির ছবি সংগ্রহ করে নাম বা সাহায্য প্রেরণের নম্বর পরিবর্তন করে প্রতারণাপূর্ণ সাহায্যের আবেদন করতে থাকে। মারুফ জানান, নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া নম্বরটি ব্যতীত অন্য কোন নম্বরে সাহায্য নেয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। এছাড়া সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুবা মারা যায় এবং এরপর থেকে কোন সাহায্য গ্রহণ করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি সবাইকে এসব ভুয়া আবেদনে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান।
সুতরাং শিশু মুনতাহা তুবার ছবি দিয়ে পিতার সাহায্য প্রেরণের প্রকৃত বিকাশ নম্বর ও শিশুটির নাম পরিবর্তন করে আর্থিক সহায়তার দাবি জানানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে; যা প্রতারণামূলক।