নুরের বিরুদ্ধে কি 'ধর্ষণের অভিযোগে' মামলা হয়েছে?
মূলধারার সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টিংয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউন এর বাংলা ভার্সনে ২১ সেপ্টেম্বর একটি খবরের শিরোনাম, "ডাকসু ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা"।
আর্কাইভ লিংক এখানে।
বাংলানিউজের প্রতিবেদনের শিরোনাম, "ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা"
যুগান্তরের শিরোনাম, "ডাকসু ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা"
চট্টগ্রাম ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম সি-প্লাস এর শিরোনাম, "ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ"।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে--
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে।
রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় মামলাটি করেন।"
বাংলানিউজের প্রতিবেদনের শুরুতে লেখা হয়েছে--
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।"
যুগান্তরের প্রতিবেদনের শুরুতে লেখা হয়েছে--
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।"
এবং একই প্রতিবেদনের শেষ লাইনে পুলিশ বরাতে বলা হয়েছে--
"আশরাফ উদ্দীন বলেন, মামলার এজাহারে ৬ জনকে আসামি করা হলেও ধর্ষণকাণ্ডে ডাকসু ভিপি একাই জড়িত ছিল বলে দাবি ওই নারীর।"
এভাবে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এবং খবরের ভেতরে 'নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা', 'নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ' ইত্যাদি শব্দ ও বাক্য লেখা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, লালবাগ থানায় ২০ সেপ্টেম্বর যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটির এজহারে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুলহক নুরের বিরুদ্ধে 'ধর্ষণের' অভিযোগ করেননি অভিযোগকারী নারী। বরং হাসান আল মামুন নামে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক নেতার বিরুদ্ধে 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে (মামুনের বাসায়) ধর্ষণ' করার অভিযোগ করেছেন।
মামলায় মামুন ছাড়াও নুরসহ আরও ৫ জনকে আসামি করেছেন অভিযোগকারী নারী। এজহারে নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ধর্ষণের ঘটনার বিচার চাওয়ার পরেও বিচার না করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভিক্টিম নারীকে নানাভাবে চাপ দেয়ার।
এজহারে লেখা হয়েছে--
"উপায়ন্তর না দেখে এই বিষয়ে ২০/৬/২০২০ তারিখে ৩ নং বিবাদী নুরুল হক নুরকে মৌখিকভাবে জানালে সে বলে অভিযুক্ত ব্যক্তি (মামুন) আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সাথে বসে একটি সুব্যবস্থা করে দিব। এরপর তিনি ২৪/০৬/২০২০ তারিখে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে আমার সাথে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু তখন তিনি মীমাংসার আশ্বাস এড়িয়ে আমাকে এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আর আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তাদের ভক্তদের দিয়ে আমার নামে উলটাপালটা পোস্ট করাবে। এবং আমাকে পতিতা বলে তারা প্রচার করবে তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.২ মিলিয়ন মেম্বারসম্পন্ন গ্রুপে। তিনি আরো বলেন, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতিমধ্যে মামলার ৪ নং আসামী সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটাতে ৫ও ৬ নং বিবাদীকে লাগিয়ে দেয় চ্যাটগ্রুপে(মেসেঞ্জারে) আমার চরিত্র নিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মত সম্মিলিতভাবে হীনকাজ করে। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃস্থানীয় প্রায় সকল নেতাকর্মী এসব ঘটনা সম্পর্কে জানেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিষয়টিকে সুষ্ঠ সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও বিবাদীরা তাদেরকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয় বলে আমি জানতে পারি।"
এজহারের কপির দুটি ছবি (মোবাইলে তোলা) এখানে যুক্ত করা হচ্ছে। (অনিবার্য কারণে অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ না করতে কিছু জায়গা কালো করে দেয়া হয়েছে)।
এজহারের ছবি-১:
এজহারের ছবি-২:
কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে অবশ্য 'নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ/মামলা' ইত্যাদি শব্দ পরিহার করা হয়েছে। আবার কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রথমে প্রকাশ করা হলেও পরে সম্পাদনা করে বাদ দেয়া হয়েছে।
যেমন এনটিভির প্রথম শিরোনাম ছিলো, "নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ঢাবি শিক্ষার্থীর মামলা"।
সিদ্ধান্ত:
যেখানে মামলার এজহারের অভিযোগকারী নুরের বিরুদ্ধে 'ধর্ষণে অভিযোগ' করেননি, সেখানে সংবাদের শিরোনামে বা প্রতিবেদনের ভেতরে 'নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ', 'নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা' ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ সাধারণ পাঠকদের জন্য বিভ্রান্তিকর।