উচ্চ মাধ্যমিকে মুর্শিদাবাদের রুমানার প্রথম হওয়ার খবরে ভুল তথ্য
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সমগ্র ভারতে নয় বরং পশ্চিমবঙ্গে প্রথম হয়েছেন রুমানা, এছাড়া ভাইরাল খবরটিতে শিক্ষামন্ত্রীর নামও ভুল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভাইরাল খবরে বলা হচ্ছে, ভারতে রুমানা আক্তার নামের এক তরুণী উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০ নম্বরে ৪৯৯ পেয়ে প্রথম হয়েছেন। দেখুন এমন কয়েকটি পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২২ জুলাই 'দৈনিক শিক্ষা বার্তা' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি খবর পোস্ট করে বলা হয়, 'ভারতে উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০ নাম্বারে ৪৯৯ পেয়ে প্রথম হলেন রুমানা আক্তার'। হুবহু একই রকম শিরোনামে একই দিনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মুর্শিদাবাদের কান্দি হাইস্কুলের শিক্ষার্থী রুমানা আক্তার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৫০০ নাম্বারের মধ্যে ৪৯৯ পেয়ে প্রথম হয়েছেন। খবরটিতে আরো বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী মহুয়া দাস বলেছেন, এবার একজনই সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে এবং সে একজন মুসলিম। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে। এছাড়া সেই খবরটির বিস্তারিত অংশের আর্কাইভ এখানে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, খবরটির শিরোনামে বলা হয়েছে, ভারতে উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৯৯ পেয়ে প্রথম হয়েছে 'রুমানা আক্তার'। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে দেখা গেছে, সমগ্র ভারত নয় বরং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে রুমানা। এ ব্যাপারে আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়,
"উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেলেন মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির ছাত্রী। কান্দি থানার শিবরামবাটি এলাকার বাসিন্দা রুমানা সুলতানার সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার।"। অর্থাৎ সমগ্র ভারতে নয়, কেবল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সর্বাধিক নম্বর পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের মেয়ে রুমানা। দেখুন গত ২২ জুলাই প্রকাশিত আনন্দবাজারের খবটির স্ক্রিনশট--
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
দ্বিতীয়ত, ভাইরাল খবরটিতে মহুয়া দাসকে 'শিক্ষামন্ত্রী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সার্চ করে দেখা গেছে, মহুয়া দাস পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নন। মূলত তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'নিউজ এইটিন বাংলা'য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়,
"বৃহস্পতিবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস বলেছিলেন, ''সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে সংসদে একটা ইতিহাস হয়েছে। যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন একা। একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা।"
নিউজ এইটিন বাংলার প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। দেখুন এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট এখানে।
এছাড়া, রুমানার নাম ভাইরাল খবরটিতে রুমানা আক্তার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' সহ সব গণমাধ্যমে তাঁর নাম 'রুমানা সুলতানা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকতর সার্চ করে ভারতের একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম 'newsncr.com' এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে রুমানার মেট্রিকুলেশনের মার্কশিটের ছবি খুঁজে পেয়েছে বুম বাংলাদেশ। মার্কশিটে তাঁর নাম রুমানা সুলতানা উল্লেখ করা আছে। দেখুন খবরটিতে জুড়ে দেয়া মার্কশিটের ছবির একটি স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে রুমানা সুলতানার সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে।