সোহাগী সামিয়াকে 'শিক্ষার্থী নয়' বলে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, তিনি খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কর্মী।
সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজ থেকে দাবি করা হচ্ছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে একজন নারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থী সেজে উস্কানি দিচ্ছেন। দেখুন এমন কিছু পোস্টের লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩ ডিসেম্বর 'Kohale Quddus' নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে বলা হয়, 'উনি স্কুল শিক্ষার্থী না! সমাজতান্ত্রিক দলের ঢাকা নগরের দপ্তর সম্পাদক সোহাগী সামিয়া..সাধারণ স্কুল শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও স্কুলের ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় নেমে উস্কানি দিচ্ছে..সাধারণ ছাত্র ছাত্রী সেজে ভিনদেশী দালালেরা মানুষকে কিভাবে বোকা বানাচ্ছে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছাত্র ফ্রন্ট। #HalfPass'।
অর্থাৎ পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে, সমাজতান্ত্রিক দলের ঢাকা নগরের দপ্তর সম্পাদক সোহাগী সামিয়া স্কুলের ইউনিফর্ম পরে সাধারণ ছাত্রী সেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তিনি মূলত শিক্ষার্থী নন। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
এরকম আরেকটি পোস্টের স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আন্দোলনকারী সোহাগী সামিয়া সংক্রান্ত এই পোস্টগুলো বিভ্রান্তিকর। প্রথমত সেখানে দাবি করা হচ্ছে, সোহাগী সামিয়া কোনো শিক্ষার্থী নন, তিনি মূলত একজন রাজনৈতিক কর্মী। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে উস্কানি দিতে তিনি শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে সেখানে ঢুকে গেছেন। কিন্তু একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সোহাগী সামিয়ার পরিচয় পাওয়া গেছে। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে সোহাগী সামিয়া দাবি করেন, তিনি খিলগাঁও মডেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী। এছাড়া প্রতিবেদনমতে, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তার একাডেমিক ডকুমেন্টস দেখিয়ে বলেন, "আমি ৩০ বছরের কোনো মহিলা না। আমি খিলগাঁও মডেল কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। কদিন পরেই আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।" 'নিরাপদ সড়কের যৌক্তিক আন্দোলনকে বিব্রত করতে চায় সরকার, দাবি শিক্ষার্থীদের' শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় গত ৪ ডিসেম্বর। দেখুন সেই খবরটির স্ক্রিনশট--
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
এছাড়া পরের দিন অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর দৈনিক দেশ রুপান্তর অনলাইনের একটি প্রতিবেদনেও সোহাগী সামিয়া নিজেকে 'এইচএসসি পরীক্ষার্থী' হিসেবে দাবি করেন। তিনি জানান, "একটা লেখালেখি ছড়াচ্ছে যে, আমি নাকি স্টুডেন্ট না। আমি নাকি স্কুল-কলেজের ড্রেস পরে ছাত্রদেরকে উসকানি দিচ্ছি। আমার কাছে আমার আইডি কার্ড আছে, সঙ্গে আছে আমি যে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী তার প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ সকল ডকুমেন্টস হাজির করছি।" দেখুন--
পড়ুন প্রতিবেদনটি এখানে।
পরবর্তীতে নিউজবাংলা২৪ ডটকমে এ সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্মে দুই কিশোরী কে?'। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত কিশোরীর নাম সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস। খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।'
তাছাড়া সেই প্রতিবেদনে সোহাগীর ছাত্রত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক কে এম নাহিদ হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, 'ওর (সোহাগী) নামে একটা মিথ্যা পোস্ট ছড়িয়ে গেছে। আসলে ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে এবার সে পরীক্ষা দিচ্ছে, আমি ওর সরাসরি শিক্ষক।'
সেই প্রতিবেদনে সোহাগী সামিয়ার এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং তার কলেজের আইডি কার্ডের কপি পাওয়া গেছে। দেখুন সেটির স্ক্রিনশট-
সেখানে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে 'সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস' হিসেবে। তার পিতার নাম শামসুল হক। তিনি ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
দেখুন নিউজবাংলা২৪ এর বিস্তারিত প্রতিবেদনটি এখানে--
পড়ুন এখানে।
অর্থাৎ সোহাগী সামিয়া শিক্ষার্থী নন বরং তিনি সাধারণ ছাত্রী সেজেছেন দাবিটি অসত্য।
পোস্টগুলোতে আরো দাবি করা হচ্ছে, সোহাগী সামিয়া 'সমাজতান্ত্রিক দল' ঢাকা নগরের দপ্তর সম্পাদক। প্রকৃতপক্ষে নিউজবাংলা২৪ এর বরাতে জানা যায়, তিনি মূলত 'সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট' এর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেটি নিশ্চিতও করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স। এছাড়া সংগঠনটির বিবৃতিতেও বিষয়টি পরিস্কার। দেখুন--
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা 'ফ্যাক্টওয়াচ' এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পড়ুন তাদের বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক রিপোর্টটি এখানে।
অর্থাৎ এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোহাগী সামিয়ার নামের এক আন্দোলনকারীকে শিক্ষার্থী নন এবং ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থী সাজার দাবিটি বিভ্রান্তিকর। তবে তার একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হওয়ার দাবিটি সত্য।