জার্মান শিশুর ভিডিওকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর দাবি সামাজিক মাধ্যমে
শিশুটিকে ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং এরসাথে সমকামিতা সম্পর্কিত কোনো মন্তব্যের সম্পর্ক নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি শিশুকে জোরজবরদস্তি করে তুলে নেয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটি স্কুলে গিয়ে তার মা-বাবার বরাতে বলেছে, সমকামিতা ইসলামে হারাম। তাই শিশুটিকে বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে জার্মান প্রশাসন। ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট একটি শিশুকে পুলিশের পোশাক এবং সাদা পোশাকধারী কয়েকজন মিলে জোর করে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২ মে "Muslim Voice24" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিও ফুটেজটি শেয়ার লেখা হয়েছে, "একি হলো জার্মানে😠 সন্তান স্কুলে গিয়েছে বলেছে, তার বাবা-মা বলেছেন, সমকামিতা ইসলামে হারাম। তাই তাকে বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে জার্মান প্রশাসন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওর ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়।
কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিতে "German police forcefully removed Muslim boy from his family" শিরোনামে ভিডিওটি সম্পর্কিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যা গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে জার্মান পুলিশ কর্তৃক জার্মানির ব্রেমারহ্যাভেনে এক ছোট শিশুটিকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। ভিডিওটি আরবি ভাষাভাষী এক ব্যক্তি ধারণ করেছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ অফিসারকে বলতে শোনা যায়, “এটি আদালত এবং ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার অফিসের সিদ্ধান্ত এবং তারা আদালতের নির্দেশ পালন করছেন।” তবে শিশুটিকে নিয়ে যাবার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে। দেখুন--
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, জার্মান ভাষী সংবাদমাধ্যম কারেক্টিভ ফ্যাক্টেনচেকে "Child picked up by the police in Bremerhaven? What can be said about the video"( স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ) শিরোনামে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্রেমারহ্যাভেন পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি ভিডিওর ঘটনার সাথে হোমোফোবিয়ার সংশ্লিষ্টতার কথা নাকোচ করে দেয়। একই প্রতিবেদনে জর্ডানের সংবাদমাধ্যম ‘Roya News’-এর এক প্রতিবেদন বরাতে জানানো হয়, শিশুটির বারবার চিৎকার শোনা গিয়েছিল, প্রতিবেশীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দেখুন--
পরবর্তীতে জার্মানির ব্রেমারহ্যাভেন পুলিশের একজন মুখপাত্রের বরাতে সংবাদ সংস্থা ডিপিএকে জানায়, আলোচ্য ভিডিওর সঙ্গে কারো পারিবারিক বা লিঙ্গগত পরিচয়ের সম্পর্ক নেই। তবে জার্মানির ব্রেমারহ্যাভেন পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি সঠিক জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করা হয় গত ২৯ এপ্রিল। সেখানেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণকালে ভিডিওরটি ধারণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। দেখুন--
সার্চ করে www.kreiszeitung.de সংবাদমাধ্যমেও ভিডিওটি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে পুলিশ কর্তৃক শিশুটিকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার কর্তৃপক্ষের নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, ভাইরাল ভিডিওটির সাথে সমকামিতা বিষয়ক কোনো বিতর্কের যোগসূত্র নেই।
অর্থাৎ শিশুটিকে ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেয়া হলেও এর সাথে সমকামিতা সম্পর্কিত কোনো মন্তব্যের সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে অভিবাসী, তরুণ, একক অভিভাবক, অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল বা শিশু লালন পালনে অক্ষম প্রমাণিত পরিবারগুলো থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে সোশ্যাল সার্ভিসের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। যদিও এই পদ্ধতিটি বেশ সমালোচিত।
সুতরাং জার্মানিতে মুসলিম শিশুকে পুলিশের নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।