ছবিটি ইরাকের পাহাড়ে পাওয়া শ্রী রামচন্দ্রের ভাস্কর্যের নয়
ইরাকি গবেষকদের মতে, খোদাইকৃত চিত্রটিতে প্রাচীন ইরাকের একজন ট্রাইবাল শাসক তারদুন্নিকে চিত্রিত করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ইরাকের পাহাড়ে শ্রী রামচন্দ্রের অনেক পুরোনো ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে। ছবিটিতে পাহাড়ের গায়ে খোদাইকৃত কোমরে তলোয়ার গোজা একজন যোদ্ধাকে ধনুক ও হাতে এবং তার পায়ের কাছে দুইজন ব্যক্তি করজোড়ে নত অবস্থায় দেখা যায়। দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১২ মার্চ "Suvankar Majumder" নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ইরাকের পাহাড়ে শ্রীরামচন্দ্র।সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের অস্তিত্ব। তিনি ছিলেন চক্রবর্ত্তী রাজা। চক্রবর্ত্তী রাজা তাঁকেই বলা হয়, যার রাজত্বে একই সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত হয়। অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যার রাজত্ব তিনিই চক্রবর্ত্তী রাজা। রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডে রাজা দশরথ রাণী কৈকেয়ীকে তাঁর এই সুবিশাল সাম্রাজ্যের বর্ণনা করেন।এই বর্ণনাতেও পাওয়া যায়, রাজা দশরথের রাজত্ব পৃথিবীর অধিকাংশ ভূখণ্ড জুড়েই বিস্তৃত ছিলো। দক্ষিণের দ্রাবিড়দেশ, সিন্ধু-সৌবীর দেশ, সৌরাষ্ট্র, দক্ষিণাপথ, বঙ্গদেশ, অঙ্গদেশ, মগধ ও মৎস্যদেশ, কাশি, কোশল – এই সকল সমৃদ্ধ দেশ সহ, যতদূর পর্যন্ত সৌরচক্র আবর্তিত হচ্ছে এই বসুন্ধরার ততদূর পর্যন্ত ভূখণ্ড রাজা দশরথের অধীন।[...]”। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করার পর, 'World History Encyclopedia' নামের একটি ওয়েবসাইটে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার গবেষক এবং পেশায় নিউরোলজি সহযোগী অধ্যাপক ওসামা সুকির মোহামেদ আমিনের লেখা একটি নিবন্ধের সাথে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। পাথরে খোদাইকৃত চিত্রকর্ম ‘Rock-Relief of Tar...dunni’ বা “Darband-i Belula” বলা হয়। যা ইরাক-ইরান সীমান্তের ইরাকি কুর্দিস্তানের সুলায়মানিয়া শহরের কাছে দারবন্দ-ই-বেলুলা পর্বতের পাহাড়ের পাশে অবস্থিত।
সার্চ করার পর ছবিটি এবং এর বিস্তারিত ইতিহাস সম্পর্কে "Never Before Seen: The Belula Pass Rock Relief" শিরোনামে ওসামার একটি নিবন্ধও খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে সুলাইমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওসমান তৌফিকের সৌজন্যে আলোচ্য চিত্রকর্মের একাধিক ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছবিগুলোর বিবরণ ও সুলায়মানিয়া জাদুঘরের পরিচালক থেকে জানা যায়, খোদাইকৃত চিত্রকর্মটি “তার…দুন্নি” নামের একজন স্থানীয় ট্রাইবাল শাসকের। যাকে প্রাচীন ইরাকের লুলুবিয়ান আদিবাসীদের একজন রাজা বা রাজপুত্র বলে ধারণা করা হয়। আর ছবিটিতে তার পায়ের কাছে যাদের বসে থাকতে দেখা যায় তারা লুলু যোদ্ধাদের হাতে পরাজিত তাদের শত্রুরা হুরিয়ান সৈন্য হতে পারে।
যাচাইকারী সংস্থা Logically.ai ছবিটির ব্যাপারে দক্ষিণ এশীয় এবং আরব প্রত্নতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ অকশেতা সুরিয়ানারায়ণের (Akshyeta Suryanarayan) সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও ছবিটি হিন্দু কোনো দেবতা বা দেবীর নয় বলে নিশ্চিত করেন। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা সম্পর্কিত বেশ কিছু গবেষণায় “তারদুন্নির” উল্লেখ পাওয়া যায় বলেও তিনি জানান।
অর্থাৎ এটি নিশ্চিত যে ছবিটি প্রাচীন ইরাকের একজন আদিবাসী শাসকের।
সুতরাং প্রাচীন ইরাকের একজন আদিবাসী শাসকের ছবিকে হিন্দু ধর্মীয় দেবতা রামচন্দ্রের ভাস্কর্য বলে দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।