ছবিটি কানাডার সাম্প্রতিক দাবানলের নয় বরং গ্রিসের
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, এটি ২০০৭ সালে গ্রিসের একটি দাবানলের ছবি; কানাডার দাবানলের খবরের সাথে প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে সম্প্রতি কানাডায় তীব্র তাপদাহে বিস্তৃত অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। খবরটির সাথে একটি দাবানলের ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে বাড়ি সদৃশ একটি স্থাপনা সংলঘ্ন পাহাড়ি বনাঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এমন কয়েকটি লিংক দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
গত ২ জুলাই ইংরেজি পত্রিকা 'The Bangladesh Today' এর ফেসবুক পেজে পত্রিকাটির অনলাইন বাংলা সংস্করণের একটি খবরের লিংক শেয়ার করা হয়, যার শিরোনাম "কানাডায় গরমে মৃত্যু ৫ শতাধিক: বিশাল অঞ্চলে দাবানল, লাইটন গ্রাম পুড়ে ছাই"। খবরটিতে দাবানলের উক্ত ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, ইরান ভিত্তিক বাংলা বেতার রেডিও তেহরানের ফেসবুক পেজ 'Radio Tehran-বাংলা' এর ফেসবুক পেজ থেকে গণমাধ্যমটির বর্তমান ওয়েবসাইট পার্স টুডের একই ছবি ও শিরোনামসহ খবরটির লিংক শেয়ার করা হয়েছে। এসব সংবাদমাধ্যমের খবরে ব্যবহার করা ছবির নিচে কোন ক্যাপশন দেয়া হয়নি; ফলে স্বাভাবিকভাবেই খবরের সাথে ব্যবহার করা ছবিটিকে কানাডায় সাম্প্রতিক দাবানলের বলে মনে হতে পারে। উল্লেখ্য কয়েক বছর আগে ইরান ভিত্তিক বাংলা বেতার 'রেডিও তেহরান' এর ওয়েবসাইটের নাম পরিবর্তন করে পার্স টুডে করা হয়। দেখুন বাংলাদেশ টুডের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা খবরটির স্ক্রিনশট--
Radio Tehran-বাংলা পেজে শেয়ার করা খবরের স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কানাডার সাম্প্রতিক দাবানলের খবরের সাথে ব্যবহার করা ছবিটি বেশ পুরনো। এটি ২০০৭ সালের গ্রিসের পেলোপোনিসি উপদ্বীপের বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানল একটি চার্চ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সময় তোলা ছবি।
রিভার্স সার্চ করে ছবিটির একাধিক ভার্সন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগস্পটে খুঁজে পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনেও ছবিটিকে যুক্ত করতে দেখা যায়, যা ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়। সিবিএস নিউজ ছবিটির সূত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অর্থাৎ এপি'র নাম উল্লেখ করেছে।
এর সূত্রধরে সার্চ করে এপি'র ছবির গ্যালারিতে মূল ছবিটির সন্ধান পাওয়া গেছে। ছবিটির ক্যাপশন বলছে, দাবানল গ্রিসের পেলোপোনিসে উপদ্বীপের আন্দ্রিতসেনা গ্রামের বাইরে জুদোহো পিগি'র একটি চার্চ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দাবানলে এরইমধ্যে ৬৩ জনের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। ছবিটি ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট তোলা হয়েছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ছবিটির চিত্রগ্রাহক হিসাবে এপি'র নিকোলাস জিয়াকুমিদিস (AP PHOTO/NIKOLAS GIAKOUMIDIS) এর নাম লেখা আছে।
এদিকে ভারতের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা বুম বাংলাও খবরটির সাথে যুক্ত ছবিটি যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসাবে চিহ্নিত করেছে। উক্ত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের কয়েকটি অঞ্চলে তীব্র তাপদাহ ও দাবানল ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধমে। এমন কিছু খবর দেখুন এখানে, এখানে।
সুতরাং, ২০০৭ সালের গ্রিসের একটি দাবানলের ছবিকে কানাডার সাম্প্রতিক দাবানলের খবরের সাথে কোন ক্যাপশন ছাড়াই প্রকাশ করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।