ইন্দোনেশিয়ায় কবরে 'অলৌকিক' আলোর দাবিটি বিভ্রান্তিকর
ঘটনাটি মালয়েশিয়ার এবং ছবিতে দৃশ্যমান আলোর উৎস সূর্যের কিরণ ও ক্যামেরার লেন্সের প্রতিফলন বলে গণমাধ্যম সুত্রে জানা গেছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি কিছু ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ায় কুরআনের এক হাফেজকে মাটি দেয়ার সময় কবর আলোকিত হয়ে গেছে। ছবিগুলোতে দাফনের দৃশ্য দেখা যায় তবে মৃত ব্যক্তির কোন নাম পরিচয় পোস্টগুলোতে নেই। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ৬ নভেম্বর 'Sraboni Islam' নামের ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করা হয় যাতে লেখা, "ইন্দোনেশিয়া কোরানের হাফেজকে মাটি দেয়ার সময় কবর আলোকিত হয়ে যায়। সুবানাল্লাহ"।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, ঘটনাটি ইন্দোনেশিয়ার নয়, মালয়শিয়ার। দ্বিতীয়ত, মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাই গণমাধ্যমের কাছে ঘটনাটির বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, Bharian.com নামে মালয়েশিয়ার একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর "Viral kubur bercahaya: Mungkin cahaya Dhuha, lensa kamera - keluarga" (এর স্বয়ংক্রিয় ইংরেজি অনুবাদ, Viral luminous grave: Probably the light of Dhuha, the camera lens - family) শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত খবরটির মালয় ভাষা থেকে স্বয়ংক্রিয় ইংরেজি অনুবাদ থেকে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ খাইরি যাইনুদ্দিন যিনি Sekolah Rendah Islam Integrasi Darul Ulum (SRIIDU) প্রতিষ্ঠাতা এবং নেগ্রি সেম্বিলানের পাস্ উলামা কাউন্সিল-এর (Negri Sembilan Pas Ulama Council) প্রধান ছিলেন। তার মৃত্যুর পর দাফনের এই ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে এবং দাবি করা হয়, মৃত ব্যক্তির কবর এবং তার চারপাশ থেকে অলৌকিক আলো বেরিয়ে আসছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৃত খাইরি যাইনুদ্দিনের ভাই নাজরী জাইনুদ্দিন কবর দেওয়ার সময় কোনো ধরণের অস্বাভাভিক ঘটনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন "আমাদের কাছে মনে হয়নি এটি কোনো আশ্চর্য হওয়ার মত কিছু।" তার মতে, এটি দুহা বা সকালের সূর্যের কিরণ (আরবি শব্দ দুহা অর্থ ভোরের রশ্মি) বা ক্যামেরার লেন্স। খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, বেশ কিছু মালয়ভাষী ওয়েবসাইটে নেগ্রি সেম্বিলান পাস্ উলামা কাউন্সিল- এর ডেপুটি মুফতি নূর আজমীর ইলিয়াসের বরাতে ছবিগুলোর আলোর ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে দেখা গেছে, যিনি দাফনে হাজির ছিলেন। এরকম একটি সাইটে "Ini Penjelasan Timbalan Mufti Mengenai KUBUR BERCAHAYA Yang Kini VIRAL (8 Gambar)" (স্বয়ংক্রিয় ইংরেজি অনুবাদ- This is the Deputy Mufti's Explanation on the LIGHTED GRAVE Which is Now VIRAL (8 Photos)) শিরোনামে খবরে মুফতি নূর আজমির বরাতে বলা হয়, "কবর দেওয়ার সময় সেখানকার তাঁবুগুলো ছেঁড়া ছিলো, সেই ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঢোকায় এমন আলোকিত লাগছিলো জায়গাটি।" প্রতিবেদনে কয়েকটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে উক্ত দাফনের যেখানে স্পষ্টতই এটি সূর্যের আলো বলেই বোঝা যাচ্ছিলো। ছবিগুলোর স্ক্রিনশট দেখুন-
উল্লেখ্য, নেগ্রি সেম্বিলান মালয়শিয়ার একটি এলাকা। মৃত মোহাম্মদ খাইরি যাইনুদ্দিন এই এলাকার পার্টি 'ইসলাম সে মালায়শিয়া' বা পাস এর উলামা কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
দাবিটি এর আগে ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে বিভ্রান্তিকর বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
অর্থাৎ মালয়শিয়ার একটি ঘটনাকে ইন্দোনেশিয়ার দাবি করা হচ্ছে এবং মৃতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী কবর থেকে অলৌকিক আলো বের হওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।