ঠোঁট-চোখ সেলাই করা রক্তাক্ত তরুণীর ছবিটি ভারতের নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি মূলত এক জাপানি মডেলের, যা ২০০৮ সালে জাপানের টোকিওতে এক অনুষ্ঠান থেকে তোলা হয়।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে এক তরুণীর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ইসলামের পক্ষে কথা বলার জন্য ভারতে ওই তরুণীর ঠোঁট ও চোখ সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। ভাইরাল ছবিতে এক তরুণীর রক্তাক্ত ঠোঁট এবং একটি চোখ সেলাই করা অবস্থায় দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২০ জানুয়ারি 'মদিনার পথিক মদিনার পথিক' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, "কেউ এড়িয়ে যাবেন না """"' বোনটির জন্য সবাই দোয়া করবেন ইসলামের কথা বলার জন্য তাঁর মুখে সেলাই করে দিয়েছে ভারতে"। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি সাম্প্রতিক নয় এবং ভারতেরও নয়। জাপানি এক মডেলের ছবিটি এর আগেও বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
কিওয়ার্ড ও রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর, ছবিটি একাধিক ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা স্নোপ্সের একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবিটি তৎকালে সামাজিক মাধ্যমে সৌদি আরবে খৃষ্টান ধর্মের বিরুদ্ধে অত্যাচারের দাবি করে প্রচার করা হয়েছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সূত্রধরে সার্চ করার পর, motleynews নামের একটি ওয়েবসাইটে 'Bagelheads | Japan's Hot Trend of Injecting Saline in Forehead for that "Bagel" Look' শিরোনামের একটি নিবন্ধে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। নিবন্ধেটি জাপানীদের স্বেচ্ছায় দেহ পরিবর্তনের বিষয়ে জাপানে বেশ জনপ্রিয় একটি রীতি সম্পর্কিত। বলা হয়, জাপানী তরুণ-তরুণীদের নানা কৃত্রিম উপায়ে শরীরে বদল করে, আলোচ্য ভাইরাল হওয়া ছবিটির সঙ্গে লেখা হয়, সম্ভবত এই ছবির তরুণী কিছু সময়ের জন্য নিজের দেহে এটা করেছিল। উক্ত নিবন্ধেই "কেরোপ্পি মেইদা" নামে জাপানী চিত্রগ্রাহকের ওয়েবসাইটের সূত্র দেয়া হয়।
এছাড়া ছবিটি "কেরোপ্পি মেইদার" ব্লগে একটি প্রদর্শনীর গ্যালারিতে খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লগ পোস্টের বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২ আগস্ট জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্ট শহরে প্রদর্শনীটি হয়েছিল।
কেরোপ্পি মেইদা পেশায় একজন সাংবাদিক এবং জাপানের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর অঙ্গ সৌন্দর্য ও ট্যাটু নিয়ে কাজ করে থাকেন। বুম ইমেল মারফত মেইদা সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ছবিটি তাঁরই ধারণ করা। "জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত 'ফেটিশ' পার্টিতে রক্তাক্ত প্রদর্শনের সময় তিনি ছবিটি ধারণ করেন। ২০০৮ সালের জাপানি সোশাল মিডিয়া তারকা তুসুকিকা ও তাঁর মডেলরা এই প্রদর্শনী করেছিল বলেও জানান মেইদা।
বুম লাইভ বাংলা ছবিটি আগেই যাচাই করে করেছে।
সুতরাং প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তোলা জাপানি মডেলের পুরোনো একটি ছবি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।