এডিট করা ভিডিওতে খালেদা জিয়ার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার
২০১৭ সালে খালেদা জিয়ার দেয়া একটি বক্তব্যকে এডিট ও বিকৃত করে ২০০১ সালের বক্তব্য বলে ছড়ানো হয়েছে ফেসবুকে।
"(গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত) ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে খালেদা জিয়া যা বলেছিলেন" শিরোনামে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে আপলোড করা ভিডিওটির বক্তব্যকে "২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে গোপন মিটিংয়ে" দেয়া বক্তব্য বলে দাবি করা হচ্ছে।
Bangla News Bank নামক একটি ফেসবুকে পেইজে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পোস্ট করা এই ভিডিওটি ৮ জুন পর্যন্ত ৭৪ লাখের বেশিবার 'ভিউ' হয়েছে। ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ শেয়ার করেছেন এটি।
ভিডিওটির আর্কাইভ লিংক।
এছাড়া আরও বহু ফেসবুক পেইজেও ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে গত কয়েক মাসের বিভিন্ন সময়ে।
ফ্যাক্ট চেক:
ভাইরাল হওয়া ২৫ সেকেন্ডে ভিডিওর প্রথম ১২ সেকেন্ডে খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়--
"ক্ষমতায় তো থাকি তারপর দেখা যাবে কী হয় দেশ নিয়ে। এই দেশ দিয়ে আর কী দরকার। আমরা যতদিন পাই থাকি, লুটেপুটে খাই দাই আরাম করে থাকি, তারপরে এই দেশ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই।"
১৩ সেকেন্ড থেকে ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যাচ্ছে--
"চেয়ারে বসেছি এমন শক্ত করে, শক্ত করে ধরে রাখতে হয় না। ওই আছেনা কী, কী একটা এড দেয় না, ফেভিকল না কী একটা আঁটা? ফেভিকল লাগায়া বইসা গেছি, কাজেই এখান থেকে আর উঠছি না, নড়ছি না।"
এই বক্তব্যগুলোকে (২০০১ সাল থেকে) ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে নিজের এবং তার দলের মনোভাব হিসেবে গোপন বৈঠকে বলেছেন প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া- এমনটাই বুঝিয়েছেন ভিডিও প্রকাশকারীরা। ভিডিওটির শিরোনাম লক্ষ্য করলেই তা স্পষ্ট বুঝা যায়।
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে দেখেছে ভিডিওটি ২০০১ সালের নয়। এবং এটিতে খালেদা জিয়ার একাধিক বক্তব্যকে এডিট করে ইচ্ছামতো জোড়া লাগিয়ে বিকৃত করা হয়েছে।
মূল যে ভিডিওর দুটি অংশ কেটে জোড়া লাগানো হয়েছে সেটি ইউটিউবে পাওয়া যায় "ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য" শিরোনামে; যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল। ২০১৭ সালেই ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিল।
bnpbdorg নামের ইউটিউব চ্যানেলে মূল ভিডিওটি দেখুন এই লিংকে।
আর্কাইভ লিংক।
১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড দীর্ঘ মূল ভিডিওর দুটি জায়গা থেকে দুটি অংশ কেটে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত করে ২৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া যেসব কথা তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব (শেখ হাসিনা) এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপারে বলেছেন, সেই কথাগুলোকেই এডিট করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে আপতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এসব কথা তিনি তার নিজের এবং নিজের দলের (বিএনপির) অবস্থান হিসেবে বলছেন।
পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে নিচে মূল ভিডিও থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হলো।
মূল ভিডিওর ৪১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড থেকে ৪৩ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়া যা বলেছেন তা হলো--
..."আমরাও তো কিছু সরকার চালিয়েছি, জানি। এই যেসব আর্মস কেনা হচ্ছে, এই আর্মসের ই এইভাবে তো হয়না কোনো দিনও। অনেক নিয়ম কানুন আছে। কিন্তু আজকাল কোনো নিয়ম কানুনেরই ধার ধারে না। টেন্ডারেরও পর্যন্ত ধার ধারে না। আজকে ফট করে এই অস্ত্র কিনে ফেললাম, ওই অস্ত্র কিনে ফেললাম। রাশিয়া থেকে কিছু কিনলাম, অমুকখান থেকে কিছু কিনলাম, এমেরিকা থেকে কিছু কিনলাম, ইন্ডিয়া থেকে কিছু কিনলাম, যেখান থেকে পাবো কমিশন দেয়া হবে, ক্ষমতায় থাকার জন্য একটু আশ্বাস দেবে, তার কাছ থেকেই কিনো। ক্ষমতায় তো থাকি তারপর দেখা যাবে কী হয় দেশ নিয়ে। এই দেশ দিয়ে আর কী দরকার। আমরা যতদিন পাই থাকি, লুটেপুটে খাই দাই আরাম করে থাকি, তারপরে এই দেশ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই। কিন্তু তোমরা (ছাত্রদল) আজকে তোমাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। তোমাদের কাছে আজকে একটা বিরাট দিন, আনন্দের দিন। তোমাদেরকে আজকে শপথ নেয়ার দিন যে, এই দেশটাকে আমরা, এইযে জালেম অত্যাচারী লুটেরা সরকারের হাত থেকে কী করে দেশটাকে আমরা বাঁচাবো। কী করে আমরা বাঁচাবো সেজন্য আমরা চিন্তাভাবনা করে কর্মসূচিও দিতে হবে, এবং চিন্তাভাবনা করে কথাও বলতে হবে।"...
মূল ভিডিওর ৪৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে ৪৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ে খালেদা জিয়া যা বলেছেন তা হলো--
..."সেই জন্যে ইনারা ভাবছেন এখন বসেছি সব চেয়ারগুলোতে, বিশেষ করে যিনি আছেন, চেয়ারে বসেছি এমন শক্ত করে, শক্ত করে ধরে রাখতে হয় না। ওই আছেনা কী, কী একটা এড দেয় না, ফেভিকল না কী একটা আঁটা? ফেভিকল লাগায়া বইসা গেছি, কাজেই এখান থেকে আর উঠছি না, নড়ছি না। এই হলো অবস্থা, বুঝেছেন।..."