ইরিত্রিয়ায় পুরুষকে 'বাধ্যতামূলক দুই বিয়ের আইন' জারির খবরটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১৬ সালে খবরটি ভাইরাল হলে দেশটির তথ্যমন্ত্রী ইয়েমানে ঘেব্রেমেসকেল এটিকে ভুয়া হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়ায় অন্তত দুটি বিয়ে করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলে সে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি 'World Khobor' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে অখ্যাত একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে বলা হয়, "নতুন আ'ইনঃ পুরুষদের ন্যূনতম ২ টি বিয়ে, না করলে যাব'জ্জীবন জে'ল"। মূল খবরে বলা হয়, "আফ্রিকার ছোট্ট দেশ এরিত্রিয়ার সমস্ত পুরুষকে ন্যূনতম দু'টি বিবাহ করতেই হবে,যা আ'ইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। যদি দেশের কোনো পুরুষ বা নারী এই সিদ্ধান্তে আপত্তি করে, তা হলে শা'স্তি হবে যা'বজ্জীবন জে'ল।একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ।এক্ষেত্রে প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ, দুটোই বা'ধ্যতামূলক। এমনই আ'জব আ'ইনে সিলমোহর দিল এরিত্রিয়া সরকার।আরবিক দেশগুলির মধ্যে এরিত্রিয়াতেই শুধুমাত্র এমন আ'জব আ'ইন জারি করা হয়েছে।রীতিমতো ধ'র্মীয় আই'নের মাধ্যমে এই নির্দেশকে মান্যতা দিলেন গ্র্যান্ড মুফতি"। খবর ও পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি ভুয়া। ২০১৬ সালে অনলাইন জুড়ে এই ভুয়া খবরটি ছড়িয়ে পড়লে তৎকালে ইরিত্রিয়ার তথ্যমন্ত্রীই খবরটি খণ্ডন করে টুইটারে বার্তা দেন।
কিওয়ার্ড সার্চ করার পর, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি'তে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ' Eritrea 'appalled' by hoax forced polygamy story" শিরোনামে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কেনিয়ার সংবাদ দ্য স্ট্যান্ডার্ড-এর 'ক্রেজি মানডে' নামক সেকশনে প্রথম ইরিত্রিয়ায় দুই নারীকে বিয়ে বাধ্যমূলক শীর্ষক খবরটি রম্য হিসাবে প্রকাশিত হয়। 'ক্রেজি মানডে' সেকশনটি মুখরোচক ও চটুল সংবাদের জন্যেই পরিচিত। এরপরই খবরটি ফেসবুক ও টুইটারসহ সব জনপ্রিয় সামাজিকে যোগাযোমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ক্রেজি মানডে'র খবরটির (মূল খবরটি ডিলেট করে দেয়া হয়েছে) আর্কাইভ থেকে নেয়া স্ক্রিনশট দেখুন--
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধানের পর, ভুয়া তথ্যটি খণ্ডন করে ইরিত্রিয়ার তথ্যমন্ত্রী ইয়েমানে ঘেব্রেমেসকেল-এর অফিশিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে করা টুইটটিও খুঁজে পেয়েছে, যা ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়েছে।
একই দিনে করা আরেকটি টুইটে ইয়েমানে ঘেব্রেমেসকেল খবরটিকে "ডিসইনফরমেশন" হিসাবেই চিহ্নিত করেন।
পরবর্তীতে দ্য স্ট্যান্ডার্ড আলোচ্য ওই সংবাদটি প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং সংবাদটিকে স্রেফ 'বিনোদনমূলক' হিসাবে দাবি করে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস-এ ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতিপূর্বে একই ভুয়া দাবিটি ইরাক প্রসঙ্গেও প্রচার করা হয়েছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত আইন করে ইরিত্রিয়ার প্রতিটি পুরুষকে বাধ্যতামূলক দুই নারীকে বিয়ের খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়া।