পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ বাতিলের সিদ্ধান্ত হাসিনা সরকারের
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ’ বাক্যটি বাতিলের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ সরকারের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্টের দুটি মার্ক করা ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, পাসপোর্ট থেকে “ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ” বাক্যটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তরবর্তীকালীন সরকার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ মার্চ ‘Md Asaduzzaman Asad’ নামক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “ইহুদিদের দালাল ইউনূস ইসরায়েলর এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। আগের পাসপোর্টগুলোতে লেখা ছিল “This passport is valid for all countries of the world except Israel.” অর্থাৎ "এই পাসপোর্ট বিশ্বের সকল দেশের জন্য বৈধ, তবে ই স রাইল ব্যতীত।" কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার তার বন্ধুর মন রক্ষার্থে বন্ধু দেশের নামটি সরিয়ে দিয়ে নতুন ই-পাসপোর্টগুলোতে লিখে দিয়েছে - “This passport is valid for all countries of the world” অর্থাৎ "এই পাসপোর্ট বিশ্বের সকল দেশের জন্য বৈধ” যদিও ইসরাইলে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। হোক প্রতিবাদ!” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের পাসপোর্টে “ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ” বাক্যটি বর্তমান ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করেছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে “ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ” বাক্যটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কার নয় বরং সিদ্ধান্তটি পূর্ববর্তী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নেয়া।
কি ওয়ার্ড সার্চ করে “বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে পরিবর্তন: "ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, পররাষ্ট্রনীতি অপরিবর্তিত"” শিরোনামে ‘বিবিসি বাংলার’ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২৪ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তৎকালীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের উদ্ধিৃতি দিয়ে বলা হয, বাংলাদেশের নতুন পাসপোর্টে ইসরায়েলের নাম বাদ দেওয়া হলেও দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকার কারণে বাংলাদেশিরা ইসরায়েলে যেতে পারবে না। ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ কোন ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে না। আগের পাসপোর্টে ইসরায়েলে ভ্রমণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নতুন ই-পাসপোর্টে সেই কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
কি ওয়ার্ড সার্চ করে “ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন পাসপোর্ট প্রসঙ্গ” শিরোনামে ‘দ্য ডেইলি স্টার’ অনলাইনেও আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২৩ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে এই পাসপোর্ট বৈধ’—বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে বাদ পড়েছে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি কি ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ “Ministry of Foreign Affairs, Bangladesh” এ এই বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ মে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে ই-পাসপোর্টে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাকি সব অপরিবর্তিত থাকবে। পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ পাসপোর্ট থেকে “ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ” বাক্যটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বাদ দেওয়া হয়নি। বরং এটি ২০২১ সালে তৎকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। তখন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল।
সুতরাং পাসপোর্ট থেকে “ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ” বাক্যটি বর্তমান মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার বাদ দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।