ভারতে বসে ড. ইউনূসকে নিয়ে মন্তব্য করেনি হাসিনা, ভিডিওটি পুরোনো
২০২২ সালে এসএসএফ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিও এডিট করে ভারতীয় পতাকা যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে শেখ হাসিনার ভাষণের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ভারতে বসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে ভাষণ দিচ্ছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩০ জানুয়ারি ‘Md Jahid Hosen’ নামক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “ইন্ডিয়া থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁর ব্যাংকে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে সব থেকে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম... গ্রামীণ ব্যাংক, ব্যাংকের এমডি, আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। তখন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডির পদে সে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা উদ্যোগ নিয়েছিল যে আসলে আইনগতভাবে সে থাকতে পারে না।...”
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি এডিটেড। ভিডিওটি সম্প্রতি ভারতে শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণের নয়; প্রকৃতপক্ষে এটি ২০২২ সালের ১৫ জুনে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের ভিডিও। যেটি সম্পাদনা করে ভারতীয় পতাকা যুক্ত করা হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটির তথ্য নিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আছেন” শিরোনামে বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘Rtv News’ এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ১৫ জুনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার পরনে থাকা শাড়ি, ডান দিকে বুকের ওপর থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাচ, চশমা, সামনে থাকা তিনটি মাইক্রোফোনের মিল পাওয়া যায়। যদিও তার পেছনে থাকা ভারতের পতাকা ও ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লিখিত মনোগ্রাম দেখা যায়নি। ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও, ভিডিওটির ৩৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ড থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে আলোচ্য ভিডিওটির বক্তব্যেরও মিল পাওয়া যায়।
নিচে ফেসবুকে ভারতে ভাষণ প্রচারিত ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট (বামে) এবং ২০২২ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওর স্ক্রিনশটের (ডানে) মধ্যে মিল দেখুন পাশাপাশি--
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “‘যাকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছিলাম, সেই ড. ইউনূস বেইমানি করেছেন’” শিরোনামে ‘যুগান্তর’ অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওতে শেখ হাসিনার শাড়ি, মাইক্রোফোনের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। যেখানে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে ড. ইউনূসকে নিয়ে মন্তব্য করেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৫ জুন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিও সম্পাদনা করে ভারতীয় পতাকা যুক্ত করে আলোচ্য ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং শেখ হাসিনার পুরোনো বক্তব্য সম্পাদনার মাধ্যমে সম্প্রতি বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।