পোকার কামড়ে নয় বরং তাদের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতের মহারাষ্ট্রে বজ্রপাতে মৃত দু'জনের ছবি দিয়ে পোকার কামড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি, পেজ এবং গ্রুপে পোকা ও দু'জন মৃত মানুষের দু'টি ছবির একটি কোলাজ পোস্ট করে বলা হচ্ছে, এই পোকার কামড়ে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৬ জুলাই 'Nipul Kanti Deb' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটি কোলাজ ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "বিষে ভরা বিষাক্ত, এই পোকা থেকে সবাই সাবধান, 5 মিনিটে মৃত্যু নিশ্চিত, Share in Post, কপি পোস্ট!"। পোস্টের কোলাজ ছবিতে সবুজ পাতার উপর একটি পোকার ছবি ও পাশের ছবিতে একাধিক মৃত মানুষের ছবি দেখা যাচ্ছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। পোকার কামড়ে ছবিতে দৃশ্যমান দু'জনের মৃত্যু হয়নি বরং বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের চালিসগাঁও জেলায়।
কোলাজ ছবিটি থেকে মৃত ব্যক্তির দুটি ছবি কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ছবি দুটি "চালিসগাঁওয়ে বজ্রপাতে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে" (মারাঠি ভাষা থেকে স্বয়ংক্রিয় বঙ্গানুবাদ) শিরোনামে Aadhar News নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আপলোড করা একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ছবির সাথে আলোচ্য পোস্টের মৃত মানুষদের ছবির মিল পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সুত্র ধরে গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে মারাঠি ভাষায় কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "मुलगा आणि पत्नीसह ४५ वर्षीय शेतकरी शेतात गेला; काम करत असतानाच बाप-लेकावर अचानक काळाचा घाला" শিরোনামে ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া সংশ্লিষ্ট মারাঠি ভাষার সংবাদমাধ্যম মহারাষ্ট্র টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "জমিতে সার দিতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে এক নারী বেঁচে গেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে চালিসগাঁও তালুকের নাহাভে শিবারায়। মৃত বাবার নাম আবা শিবাজি চ্যাভান (৪৫) ও মৃত ছেলের নাম দীপক আবা চ্যাভান (১৪)" (গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনূদিত)।
অর্থাৎ পোকার কামড়ে তাদের মৃত্যু হয়নি বরং কৃষিকাজ করার সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, একই দাবিতে ছবিগুলো ভারতের সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হলে এএফপি ফ্যাক্ট চেক তথ্যটি যাচাই করে তা সঠিক নয় বলে সাব্যস্ত করে। এএফপি তাদের ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে জানিয়েছে, ছবিতে দৃশ্যমান পোকাটির কারণে কোন মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড নেই। তবে এই পোকার গায়ের লোমের স্পর্শে মানুষের শরীরে হালকা চুলকানি হতে পারে, যা ১৫ মিনিট থেকে ঘন্টাখানেক পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
সুতরাং ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে বজ্রপাতে নিহত দু'জনের ছবি দিয়ে, তারা বিষাক্ত এক পোকার কামড়ে মারা গেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।