ছবিটির সাথে জুড়ে দেয়া গল্পটি ভুয়া
ফটোগ্রাফার জানিয়েছেন, তার ছবির সাথে যে সন্তানের রক্ষার জন্য নিজের জীবন ঝুকির মুখে ফেলা মা হরিণের গল্পের কোনো ভিত্তি নেই।
ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি হরিণকে তিনটি চিতা আক্রমণ করলেও হরিণটি স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
দাবি করা হচ্ছে, হরিণটি তার বাচ্চাদেরকে বাঘের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে সে বাঘদের কাছে ধরা দেয়। আরও দাবি করা হচ্ছে, ছবিগুলো তোলার পর ফটোগ্রাফার ডিপ্রেশনে চলে যান।
এমন পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
এই পোস্ট এবং ছবি গত কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝেই নতুন করে ছড়ায়। তিন বছর আগের এরকম একটি পোস্টে ছবিটি প্রকাশ করে লেখা হয়েছে--
"ছবিটা এ যুগের শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে।
ফটোগ্রাফার ছবিটা তোলার পর থেকে ডিপ্রেসনে চলে যান। চিতার মা হরিণ আর তার দুই বাচ্চাকে ধাওয়া করে, মা হরিণটা খুব সহজে চিতাগুলোর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো কিন্তু তা না করে সে নিজেকে বলি দেয় যাতে তার বাচ্চা দুইটা পালিয়ে যেতে পারে ছবিটা দেখা যাচ্ছে মা হরিণটা তার বাচ্চাদের পালিয়ে যেতে দেখছে চিতার খাবারে পরিণত হতে হতে।"
কিন্তু অনলাইনে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ছবিটি তুলেছেন Alison Buttigieg একজন ফিনল্যান্ড ভিত্তিক ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার।
তার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, উক্ত ছবিটি তিনি ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কেনিয়া থেকে তুলেছেন। ছবির সাথে তিনি সেটি তোলার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে যেয়ে লিখেছেন, মূলত চিতাটি তার বাচ্চাদের শিকার করা শিখানোর জন্যে ইমপালা নামক একটি হরিণ-সদৃশ প্রাণিকে হত্যা না করে তার ঘাড়ে কামড় দেয়ার মত অভিনয় করছে।
এদিকে উক্ত প্রাণিটিও ভয়ে কোন নড়াচড়া করছেনা বলে দাবি ফটোগ্রাফারের। পরে শেষমেশ চিতাটি প্রাণিটিকে কুপোকাত করে ফেলে। ধারাবাহিক ছবিসহ বিস্তারিত দেখুন এখানে।
অর্থাৎ ছবিটির সাথে বাংলায় ভাইরাল হওয়া ঘটনা এবং তা দেখে ফটোগ্রাফারের "ডিপ্রেশনে" চলে যাওয়ার কোন উল্লেখ ফটোগ্রাফারের নিজের ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও পরবর্তীতে ফটোগ্রাফার নিজেও তার ছবি ঘিরে এই ভাইরাল গল্প নিয়ে বলেন, আমার ছবির সাথে ভাইরাল হওয়া ঘটনা এবং আমার ডিপ্রেশনে চলে ব্যাপারটি একেবারেই ভুয়া। দেখুন এখানে।
এরকম ভুয়া ডিপ্রেশনের গল্প তাকে কর্মক্ষেত্রে বিপদে ফেলছে বলেও এএফপিকে জানান এলিসন। তিনি আরো দাবি করেন, চিতার আক্রমণের স্বীকার হওয়া প্রাণিটি ঠিক হরিণ নয়, এটিকে বলা হয় ইমপালা। দেখুন এখানে।
তাছাড়া, ছবিটি "যুগের শ্রেষ্ঠ ছবি" বলে দাবি করা হলেও এমন কিছুর ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬ সালে এই ছবিটির জন্যে সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো এওয়ার্ড পান। দেখুন এখানে।
অর্থাৎ, উক্ত ছবির সাথে জুড়ে দেয়া হরিণের বাচ্চা রক্ষা করা মায়ের গল্প এবং ফটোগ্রাফারের "ডিপ্রেশনে" যাওয়ার পুরো ঘটনাটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।