বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশের খবরটি ভুয়া
সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ উভয়েই গণমাধ্যমকে খবরটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মামলায় খালাস পেয়ে ভারতের শিলং থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করছেন মর্মে খবর প্রচার করা হচ্ছে । এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
যেমন গত ২৮ অক্টোবর "Saiful Islam" নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের একটি ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সোনালী অর্জন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য কক্সবাজারের কৃতি সন্তান সাবেক মন্ত্রী জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ ভারতের শিলংয়ে মামলায় গত ২৬ অক্টোবর রায়ে খালাস পেয়েছেন। আদালত প্রিয় নেতাকে দ্রুত দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন।" অর্থাৎ পোস্টে সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ভারতের শিলংয়ে মামলা থেকে গত ২৬ অক্টোবর রায়ে খালাস পেয়ে দেশে ফিরছেন মর্মে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে শিলংয়ে আটক জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর পরিবার উভয়ই তাঁর খালাস ও দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়ার খবরটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে মামলা থেকে খালাস পেয়ে জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়লে, অক্টোবর ২৮ মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার তাঁর সাথে যোগাযোগ করে। "যেমন আছেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন" শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জনাব জনাব সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে লেখা হয়--
"শিলং থেকে টেলিফোনে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলো পুরনো সংবাদ, সত্যতা নেই। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলাম। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে। তারপর থেকে প্রতিবছর এ রকম বিভ্রান্তিকর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কে বা কারা প্রকাশ করে। ফেসবুকে কারা এমন সংবাদ প্রকাশ করে, কেন প্রকাশ করে—এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।' খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন-
পাশাপাশি, খবরটি যাচাই করে অসত্য হিসাবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সম্প্রচার মাধ্যম এনটিভি-এর অনলাইন সংস্করণ। গত ২৮ অক্টোবর "শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের খালাসের খবরটি মিথ্যা, জানাল পরিবার" শিরোনামে প্রকাশিত এনটিভির প্রতিবেদনে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়,
'২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে করা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান সালাহউদ্দিন। কিন্তু ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এখন পর্যন্ত আপিল শুনানি শুরুই করেননি আদালত। সুতরাং খালাস পাওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তথ্য ছড়িয়েছে তা সঠিক নয়। মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।'
অর্থাৎ '২৬ অক্টোবর' খালাস পেয়েছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ২০১৮ সালের। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের আপিল করে, যার শুনানি এখনো শুরুই করেননি আদালত। ফলে দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়ার খবরটিও ভিত্তিহীন। জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী উভয়ই সাম্প্রতিক সময়ে ছড়ানো তাঁর খালাস ও দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়া সংক্রান্ত খবরটি অসত্য বলে জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত আরো খবর দেখুন এখানে।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ২ মাস পর ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে খোঁজ পাওয়া যায় জনাব সালাহউদ্দিনের।
সুতরাং পুরানো খবরকে ভিত্তি করে বিভ্রান্তিকরভাবে ভারতের আদালত কর্তৃক বিএনপি নেতা জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের খালাস ও দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়ার ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।