সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানকে নিয়ে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের মন্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে দাবি করা হয় তারেক রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করেছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
গত ২ জানুয়ারি 'Ajker - khobor' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "তারেক রহমানকে নিয়ে কি বললেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ।"। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশের যাচাইয়ে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের মন্তব্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
যা দাবি করা হচ্ছে ভিডিওটিতে
টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি ওই প্রতিবেদনে বলতে শোনা যায়,"বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার উল্লেখ করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। তিনি বলেন: যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমানকে বাংলাদেশ কিংবা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। শুধু তারেক রহমান কেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে নিপীড়িত কোন ব্যক্তিকেই যুক্তরাজ্য এভাবে অনিরাপদ করে কারও হাতে তুলে দেয় না।" দাবি করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র কাছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ চিঠির প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, যা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত হয়েছে।
যে কারনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাতে প্রচারিত উক্তিটি ভুয়া
প্রথমত,
চলতি বছর পোস্ট করা ভিডিওটিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বরাতে প্রচারিত মন্তব্যটি থেরেসা মে'র বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। ২০১৯ সালেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঋষি সুনাক।
মূলত কী ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, 'তারেককে ফেরত পাঠাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের চিঠি' শিরোনামে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়। কিন্তু এই চিঠিটির উত্তর দেয়া হয়েছে এমন কোনো খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
দ্বিতীয়ত,
ভিডিওটিতে খবরটির তথ্যসূত্র হিসেবে যুক্তরাজ্যেরই সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলকে উল্লেখ করা হলেও একাধিকবার, একাধিক কীওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধানের পরও ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি কিংবা এরকম কোনো খবর আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোনো সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বরাতে প্রচার করা মন্তব্যটি ভুয়া। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি করে চিঠি দিলেও ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকার কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
সুতরাং বিএনপি নেতা তারেক রহমান প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বরাতে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।