বিবিসি বাংলার নামে নকল ফটোকার্ড প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, বিবিসি বাংলার ফটোকার্ড ফরম্যাট সম্পাদনা করে মির্জা ফখরুলের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
![বিবিসি বাংলার নামে নকল ফটোকার্ড প্রচার বিবিসি বাংলার নামে নকল ফটোকার্ড প্রচার](https://www.boombd.com/h-upload/2025/01/31/1039403-1ab-tausif23.webp)
অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিবাদে আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এই কর্মসুচী ঘোষণার পরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ফটোকার্ড পোস্ট এবং শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি এর বাংলা সংস্করণ; বিবিসি বাংলা একটি সংবাদের ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে।
ফটোকার্ডটিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, “আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিতেই পারে। আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। কোনো দলের রাজনৈতিক অধিকার হরণের পক্ষে নই"। এরকম ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
৩১ জানুয়ারি 'Abidur Rahim Bhuiyan' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এমন একটি ফটোকার্ডটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ফটোকার্ডটি সম্পাদিত। বিবিসি বাংলার ফটোকার্ড ফরম্যাট সম্পাদনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ভিত্তিহীন মন্তব্য জুড়ে দিয়ে ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে।
হুবহু এই মন্তব্য দিয়ে সার্চ করে ফেসবুকে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ফটোকার্ডটি ফেসবুকে পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে খুঁজেও এর আগে এই ফটোকার্ডটি কোথাও প্রকাশ-প্রচার হতে দেখা যায়নি। এদিকে আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে গত ২৮ জানুয়ারি রাতে।
এই অনুযায়ী বিবিসি বাংলার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে খুঁজে গত ২৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি বা তার কাছাকাছি সময়ে এ জাতীয় কোনো ফটোকার্ড গণমাধ্যমটির ফেসবুকে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি সার্চ করে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটেও আলোচ্য দাবির বিষয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত অন্য একটি ফটোকার্ডের সাথে আলোচ্য ফটোকার্ডটির ডিজাইন, যতিচিহ্নের ব্যবহার সহ বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আলোচ্য ফটোকার্ড (বামে) ও গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ডের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
প্রচারিত ফটোকার্ডে বাক্যের পরে স্পেস দিয়ে যতি চিহ্ন দেওয়া হয়েছে যা একটি ভুল লিখন পদ্ধতি। সাধারণত মূলধারার গণমাধ্যমে এমন প্রাথমিক পর্যায়ের ভুল দেখা যায় না। এছাড়াও ফন্ট এবং লেখার ধরণ, ছবির প্লেসমেন্ট সহ বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখা গেছে।
অর্থাৎ আলোচ্য ফটোকার্ডটি বিবিসি বাংলা'র ফটোকার্ড ফরম্যাট ব্যবহার করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
যেহেতু সার্চ করে দাবি অনুযায়ী শিরোনামের কোনো ফটোকার্ড বিবিসি বাংলার-র ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়নি। এমনকি সার্চ করে বিবিসি বাংলা সহ মূলধারার কোনো গণমাধ্যমের কোনো সংস্করণেই আলোচ্য দাবি সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সেহেতু ফটোকার্ডে উল্লিখিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি ভিত্তিহীন।
উল্লেখ্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী আওয়ামীলীগের মাসজুড়ে ঘোষিত কর্মসূচীতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবে দলটি। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক 'কঠোর' হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারি বিবিসি বাংলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একান্ত দুই পর্বের সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাতকারে তিনি বলছেন,আওয়ামী লীগ আসতে পারলে আসবে, না আসতে পারলে আসবে না। দ্যাটস নট মাই পয়েন্ট। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কথা নেই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোন দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা তো দলগুলো নিজেরাই ঠিক করবে। তখনকার সেটআপ ঠিক করবে, ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। আমরা কথাটা খুব পরিষ্কার করেই বলছি যে, আমরা মনে করি কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা চাই যে, জনগণের মাধ্যমে সবকিছু নির্ধারিত হবে।
সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবিসি বাংলার ফটোকার্ড ফরম্যাট সম্পাদনার মাধ্যমে বিকৃত করে ভিত্তিহীন তথ্যসহ প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।