বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের খবর প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর, বাংলাদেশে নয় বরং পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ১২ জন নিহত হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ১০ জানুয়ারি 'আন্তর্জাতিক খবর' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীণ আ'লীগ-কে ঘিরে ধরেছে!সরকার বিরোধী বিক্ষোভ একদিনে নিহত ১২"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে রেখেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ১২ জন নিহত হয়েছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ১২ জন নিহত হয়েছে বলে লেখা হলেও ভিডিওটির বিষয়বস্তুতে এমন তথ্য নেই। বরং ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুতে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।
পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সংযুক্ত ভিডিওটির ১৮-২৩ সেকেন্ডে শিরোনাম হিসেবে বলা হয়, 'যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে সম্পর্ক রাখা চ্যালেঞ্জিং বলছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী'। পরে, ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিট ০৬ সেকেন্ডে বলা হয়, "একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে সম্পর্ক রাখা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমরা সেটা ভালোভাবেই করে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাংয়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে কথা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী চীন। চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান আব্দুল মোমেন। পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চীনের সহযোগিতার বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। এছাড়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় অর্থ সহায়তার বেশকিছু চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু সব এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আব্দুল মোমেন। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ছিন গ্যাং। জবাবে আব্দুল মোমেন তাকে আরও বেশি সময়ের জন্য বাংলাদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইথিওপিয়াসহ আফ্রিকার পাঁচ দেশ সফরে যাওয়ার পথে এ যাত্রাবিরতি করেন তিনি। ছিন গ্যাংকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বেইজিং..." তবে, পুরো ভিডিওটির মধ্যে দেশে কোনোপ্রকার সরকারবিরোধী আন্দোলন বা সংঘর্ষের কথা বলা হয়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১০ জানুয়ারি 'যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চ্যালেঞ্জিং: পররাষ্ট্রমন্ত্রী' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিও থেকে প্রাপ্ত সংবাদ বক্তব্যের মত হুবহু বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভিডিওটির ৩৫-৪২ সেকেন্ডে সংবাদ শিরোনাম হিসেবে বলা হচ্ছে, 'পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, একদিনেই নিহত অন্তত ১২'। পরে, ভিডিওটির ৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে সংবাদের মুল বিষয়বস্তু হিসেবে বলা হয়, ''লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিক্ষোভকারীরা দেশটির একটি বিমানবন্দরে হামলার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। মূলত গত এক মাস ধরে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত রয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেরুর পুনো অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর জুলিয়াকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে রক্তপাতের নতুন এই ঘটনাটি ঘটে বলে স্থানীয় ন্যায়পাল অফিসের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোকে। পরে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাকে বন্দি করা হয়। আর এরপর থেকেই কার্যত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে...''। অর্থ্যাৎ, ভিডিওর বিষয়বস্তু থেকে দেখা যায়, ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে।
অনুসন্ধানে দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১০ জানুয়ারি 'পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, একদিনেই নিহত অন্তত ১২' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির বক্তব্য হুবহু খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন---
সুতরাং ভিন্ন দেশে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনার খবরকে এমন চটকদার শিরোনামে উপস্থাপন করা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে মনে হচ্ছে ঘটনাটি বাংলাদেশের, যা বিভ্রান্তিকর।