ছবিটি পুরোনো, নোয়াখালীতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার খবরটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি ২০২০ সালের এবং নোয়াখালীর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন নতুন করে সাম্প্রতিক হামলার খবর ভিত্তিহীন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, গত শুক্রবার (২২ তারিখ) নোয়াখালীতে এক হিন্দু নারী ও আরো দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে ৩০টির বেশি ঘরে। দেখুন এমন দুটি পোস্ট এখানে এবং এখানে।
গতকাল ২৩ অক্টোবর Hindu Creative & Dating Community নামের ফেসবুক গ্রুপে একজন নারীর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়, গত শুক্রবার অর্থাৎ ২২ অক্টোবর নোয়াখালীতে বেশকিছু মুসলিম জনতা হিন্দু এলাকায় প্রবেশ করে এক গর্ভবতী নারীকে গণধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করে। এছাড়াও আরো দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে সেই পোস্টে দাবি করা হয়। পোস্টের বর্ণনামতে, ৩০টির বেশী ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট এখানে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিসহ এই পোস্টটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, পোস্টের সাথে যুক্ত ছবিটি যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, ছবিটি পুরোনো। ২০২০ সালে একাধিক অনলাইন পোর্টালে ভাইরাল পোস্টের ছবিটি পাওয়া গেছে। গত বছরের ২৪ এপ্রিল বাগেরহাট২৪ নামক একটি অনলাইন পোর্টালে এই ছবিটি একটি প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। "মোংলায় গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ আহত-৭, থানায় অভিযোগ" শিরোনামের খবরটির সাথে যুক্ত ছবিটি দেখুন--
মোংলা প্রতিনিধির বরাতে এই খবরটিতে বলা হয়, 'শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চিলা ইউনিয়নের গোলেরডাঙ্গা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার এ ঘটনা ঘটে। এসময় সুমিতা বালা নামে সন্তান-সম্ভবা এক গৃহবধু ও শিশুসহ ৫জন জখম হয়েছে।'
ছবিটির ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশ বাগেরহাট২৪ এর সম্পাদক খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল এবং মংলা প্রতিনিধি মাসুদ রানা'র সাথে যোগাযোগ করে। তারা উভয়ই নিশ্চিত করে ছবিটি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে মংলাতে জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। উক্ত নারীর এই ছবিটি নেয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে।
এ সংক্রান্ত আরেকটি খবরে একই ছবি প্রকাশিত হয় দেশওয়ান নামের একটি অনলাইন পোর্টালে; গত বছরের ২৫ এপ্রিল। দেখুন--
দ্বিতীয়ত, ভাইরাল এই পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে, গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) হত্যা ছাড়াও নোয়াখালীতে ৩০টির বেশি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলেও দাবি করা হয়। কিন্তু নোয়াখালীর ঠিক কোথায় কখন এই হামলার ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ করা হয়নি কোনো তথ্যসুত্রও। হত্যা বা হামলার ঘটনা ঘটলে সেটি গণমাধ্যমে আসা বাঞ্ছনীয়।কিন্তু বিভিন্ন ভাবে সার্চ করেও কোন বাংলাদেশি গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীতে এমন কোনো হত্যা বা হামলার খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টিতে আরো নিশ্চিত হতে আমরা যোগাযোগ করি নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপারের সাথে। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ২২ অক্টোবর কোন হিন্দু নারীকে ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনা তো দূরের কথা, বরং ১৫ অক্টোবরের পর নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক হামলার কোন ঘটনাই ঘটেনি। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বা যারা উদ্দেশমূলকভাবে এ ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্ট চেক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বুম লাইভ। দেখুন তাদের প্রতিবেদনটি এখানে।
অর্থাৎ ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ব্যবহার করে নোয়াখালীতে হিন্দু পাড়ায় হত্যা ও হামলার সুত্রবিহীন ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যা বিভ্রান্তিকর।