মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাকের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ না করার বিধান রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণার পর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে নিয়ে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসছে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
৩ নভেম্বর 'Voice of Bangladesh' নামের একটি পেজ থেকে একটি গ্রাফিক কার্ড পোস্ট করে লেখা হয়, "ব্রেকিং নিউজঃ- মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসছে বিএনপি নেতা ইশরাক। মার্কিন ভিসা বাতিল হতে যাচ্ছে বিএনপি নেতা ইশরাকের হোসেনের। ২৮ অক্টোবর বিকেলে বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন মিয়া আরেফী নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক। তিনি ইশরাকের পাশেই বসা ছিলেন। তাকে ইশরাক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে কোন কোন শ্রেণীর ব্যক্তিদের উপর ভিসানীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কোন কোন শ্রেণীর উপর প্রয়োগ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে কাদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে সেসব ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করার নীতিও নেই যুক্তরাষ্ট্রের আইনে।
ভিসানীতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপিতে কী বলা হয়েছে:
কি-ওয়ার্ড সার্স করে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এর ওয়েবসাইটে গিয়ে "Taking Steps to Impose Visa Restrictions on Individuals Involved in Undermining the Democratic Election Process in Bangladesh" শিরোনামে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মাঝে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। এই ব্যক্তি এবং তাদের নিকটবর্তী পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইটে ২২ সেপ্টেম্বর "বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ" শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পুরো বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশট দেখুন--
ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোনো ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে সূত্রহীন দাবি প্রচার:
ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন একাউন্ট থেকে বিএনপি নেতা ইশরাক যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বলে দাবি করা পোস্টগুলোতে কোন ধরণের সূত্র ব্যবহার করা হয়নি। যাচাই করে দেখা যায়, Voice of Bangladesh নামের পেজে "মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসছে বিএনপি নেতা ইশরাক" শিরোনামে পোস্ট করে। পোস্টটিতে সূত্রহীন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের তালিকা নিয়ে কি বলছে যুক্তরাষ্ট্র:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে কোনো ধরণের প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে "Taking Steps to Impose Visa Restrictions on Individuals Involved in Undermining the Democratic Election Process in Bangladesh" শিরোনামের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোন কোন শ্রেণীর ব্যক্তিরা কী কারণে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেতে পারেন তা উল্লেখ করলেও কোনো ব্যক্তির নামের তালিকা প্রকাশ করেনি।
সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা রেকর্ড আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়না বলে জানা যায়। "ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে ডেইলি স্টারকে যা বললেন ডোনাল্ড লু" শিরোনামে গত ২২ সেপ্টেম্বর দ্যা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।" স্ক্রিনশট দেখুন--
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু'র বক্তব্য অনুযায়ী এটি স্পষ্ট যে, কাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে তা কখনো প্রকাশ করবে না দেশটি।
অর্থাৎ ভিসা রেকর্ড আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরারাষ্ট্র দফতর।
সুতরাং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নাম উল্লেখ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; তা বিভ্রান্তিকর।