ফেরাউনের মমি কথা বলেছে তথ্যটি সঠিক নয়
গবেষকরা প্রাচীন মিশরের ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের মমির কণ্ঠনালী গবেষণা করে তার কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে এমন সাউন্ড তৈরি করেছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজে প্রচীন মমির কিছু ছবি ও ভিডিওক্লিপ পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ফেরাউনের মমিকে কথা বলছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ মার্চ 'Golam Mustafa Babu Chowdhury' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত মমির ভিডিও ক্লিপ ও ছবি এবং প্রাচীন ইতিহাসের আলোচিত ব্যক্তিদের আদলে তৈরি ভাস্কর্যের ছবি ও ভিডিও জুড়ে দিয়ে বানানো একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "ফেরাউনের মমি কথা বলছে, কি এমন রহস্য বের হলো!"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ফেরাউনের মমির কথা বলার দাবিটি সঠিক নয়। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা প্রায় ৩ হাজার বছর আগের প্রাচীন মিশরের ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের মমির কণ্ঠনালী গবেষণা করে তার কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে সে অনুযায়ী একটি থ্রিডি সাউন্ড তৈরি করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে করা একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে আরো কিছু অপ্রাসঙ্গিক ছবি ও ভিডিও জুড়ে দিয়ে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে এবং দাবি করা হচ্ছে ফেরাউনের মমি কথা বলছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আমেরিকান গণমাধ্যম CBS News এর মনিং শো'র ইউটিউব চ্যানেল 'CBS Mornings'-এ ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি "Researchers recreate what mummy's voice would have sounded like" শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে দেখানো প্রাচীন মিশরীয় ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের মমির কয়েকটি ছবি ও ক্লিপের সাথে আলোচ্য ভিডিওটির শুরুতে যুক্ত মমির ছবি ও ক্লিপের মিল রয়েছে। অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওর শুরুতে নেসিয়ামুনের মমির ভিডিওক্লিপ দেখানো হয়েছে। সিবিএস মর্নিং'য়ের ভিডিও থেকে জানা যায়, প্রাচীন মিশরের ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের মমির কণ্ঠনালী নিয়ে গবেষণা করে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে তার সম্ভাব্য কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে এমন একটি থ্রিডি সাউন্ড তৈরি করেছেন ব্রিটিশ গবেষকরা। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি "Talk like an Egyptian: mummy's voice heard 3,000 years after death" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক ৩ হাজার বছর আগের প্রাচীন মিশরের ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের মমির কণ্ঠনালী পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে সে অনুযায়ী তার কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে এমন একটি ধ্বনি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। ফারাও একাদশ র্যামেসেসের সময়ে তিনি ধর্মযাজক ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সম্প্রতি, নেসিয়ামুনের কণ্ঠস্বর কেমন ছিল জানতে তার কণ্ঠনালীর অনুকরণ করে থ্রিডি প্রিন্ট তৈরির মাধ্যমে একটি ধ্বনি তৈরি করা হয়েছে। গবেষণার সাথে যুক্ত লন্ডন ইউনিভার্সিটির রয়্যাল হলওয়ের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড হাওয়ার্ড দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, "আমরা সারকোফ্যাগাসে (মমির শবাধার) থাকা নেসিয়ামুনের ধ্বনি তৈরি করেছি। এটি তার নিজের কথা বলার ধ্বনি নয়, কারণ এখানে আসলে তিনি কথা বলছেন না।" অর্থাৎ নেসিয়ামুনের কণ্ঠস্বর কেমন জানতে গবেষকরা নেসিয়ামুনের কণ্ঠনালীর অনুকরণে একটি থ্রিডি সাউন্ড তৈরি করেছেন। এই থ্রিডি ভার্সনের সাউন্ড মমির নয় বরং মমির কণ্ঠনালীর ধরণ গবেষণা করে প্রযুক্তির সাহায্যে ধ্বনিটি তৈরি করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে পরিবেশ বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারের ওয়েবসাইট থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
উল্লেখ্য নেসিয়ামুনের মমিটি এখন যুক্তরাজ্যের লিডস মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। ফারাও একাদশ র্যামেসেসের সময়ে তিনি ধর্মযাজক ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৮২৪ সালে প্রথমবারের মত নেসিয়ামুনের মমিটি খোলা হয়। পরবর্তীতে নেসিয়ামুনের কণ্ঠনালী বহুবার সিটি স্ক্যান করিয়ে, এর আদলে কণ্ঠনালীর একটি কৃত্রিম রূপ তৈরি করে তা থেকে তার কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে এমন একটি সম্ভাব্য থ্রিডি সাউন্ড তৈরি করা হয়। এছাড়া, আলোচ্য ভিডিওতে দাবি করা ফেরাউন সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য এবং অন্যান্য ভিডিও ক্লিপ যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
অর্থাৎ প্রাচীন মিশরের ধর্মযাজক নেসিয়ামুনের কণ্ঠনালীকে গবেষণা মাধ্যমে, এর অনুকরণে প্রযুক্তির সাহায্যে তার কণ্ঠস্বর কেমন হতে পারে সম্ভাব্য একটি থ্রিডি ধ্বনি তৈরি করা হয়েছে। এদিকে, নানাভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ফেরাউনের মমি কথা বলেছে এমন তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিংবা কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং ফেরাউনের মমি কথার বলেছে বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা বিভ্রান্তিকর।