শেখ হাসিনার উপর নিষেধাজ্ঞার ভুয়া দাবি ফেসবুকে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভিসা নীতি ঘোষণা করলেও শেখ হাসিনার উপর কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে সংবাদের আদলে তৈরি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২০ মে 'News TV বাংলা' নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে সংবাদের আদলে তৈরি একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "চীন যুক্তরাষ্টে কড়া হুঁশিয়ারি দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা হাসিনার পালানোর সব পথ বন্ধ হয়ে গেলো"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভিসা নীতি ঘোষণা করলেও শেখ হাসিনার উপরে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। এছাড়াও, অন্য কোনো দেশ বা দেশি বা বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর উপরে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে পরিচালিত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ 'U.S. Embassy Dhaka'-তে গত ২৫ মে পোস্ট করা একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান যে কোন বাংলাদেশী ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান সীমিতকরণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি: “বাংলাদেশের জনগণের কাছে আজ আমাদের বার্তা হলো আমরা আপনাদের সাথে আছি, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা আপনাদের দেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে এই নীতি ঘোষণা করছি।” - ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট’র মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার"। অর্থ্যাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান সীমিতকরণে নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
উপরের ফেসবুক পোস্টটির সূত্র ধরে ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাসের ওয়েবসাইটের বাংলা ভার্সনে গিয়ে "বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে ভিসা নীতির ঘোষণা" শিরোনামে একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটির সেক্রেটারি অব স্টেট এন্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দূতাবাসের ওই ওয়েবসাইটেই "চ্যানেল আই তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমানের সাথে এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু-এর সাক্ষাৎকার" শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যানেল আইকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড লু স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, তারা এখনো কারোর উপরে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা দেননি। স্ক্রিনশট দেখুন--
চ্যানেল আইয়ে ডোনাল্ড লু'র দেওয়া সাক্ষাৎকারটি দেখুন এখানে--
এদিকে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মূল ওয়েবসাইটে "Frequently Asked Questions on New Visa Policy in Support of Bangladesh’s Elections" শিরোনামের একটি প্রশ্নোত্তর নিবন্ধেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বহুল আলোচিত এই ভিসা নীতি অনুযায়ী এখনো কোনো ব্যক্তি, দল বা সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে কোনো প্রকারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে কি-না জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে দেশত্যাগ বা কোনো প্রকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করার কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থ্যাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ভুয়া খবর প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।