করোনাভাইরাস: না, দেবী শেঠি ২২টি জরুরি পরামর্শ দেননি
করোনা থেকে বাঁচতে আগামী ১ বছরের জন্য ২২ জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন ডা. দেবী শেঠি- এমন ভুয়া খবর ছড়িয়েছে।
"করোনা থেকে বাঁচতে আগামী ১ বছরের জন্য ২২ জরুরি পরামর্শ ডা. দেবী শেঠির" শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছে কালের কণ্ঠ।
ডাক্তার প্রতিদিন নামে আরেকটি পোর্টাল একই শিরোনাম করেছে।
একুশে টেলিভিশনের অনলাইনেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে--
নয়া দিগন্তের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেও পোস্ট করা হয়েছে 'নয়া দিগন্ত জবস' নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই খবর।
২২ পরামর্শ কী কী তা দেখুন কালের কণ্ঠের রিপোর্টের স্ক্রিনশটে--
ফ্যাক্ট চেক:
প্রথমত:
উপরে উল্লিখিত কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়নি উপরিউক্ত ২২টি পরামর্শ কোথায় কাকে দিয়েছেন ডা. দেবী শেঠি, এবং কোথা থেকে পেয়ে এই সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত:
Boom Bangladesh গুগল সার্চ করে বের করার চেষ্টা করেছে ভারতীয় নামকরা চিকিৎসক দেবী শেঠির এমন পরামর্শ ভারতের কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কিনা? বা দেবী শেঠি কিম্বা তার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা নিজস্ব সামাজিক মাধ্যমে একাউন্টে এমন কোনো পরামর্শ তিনি তুলে ধরেছেন কিনা?
কিন্তু তার ২২টি পরামর্শ বা উপদেশ সংক্রান্ত কোনো খবর বা পোস্টের সন্ধান পায়নি Boom Bangladesh.
তৃতীয়ত:
গত ১৬ মার্চ টাইমস অব ইন্ডিয়ার ব্লগে দেবী শেঠির লেখা একটি নিবন্ধ পাওয়া গেছে যার শিরোনাম, "Save lives with Social Distancing: How to protect your family from coronavirus, primed to hit India like a bomb".
সেখানে তিনি ৫টি পয়েন্টে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যেগুলোর বেশ কয়েকটি বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়া খবরের মধ্যে পাওয়া যায়।
কিন্তু বেশিরভাগ পরামর্শ যেভাবে সময় ও কাজ বিশেষভাবে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে ভাইরাল হওয়া খবরে, সেরকম কিছুই লেখেন নি দেবী শেঠি।
যেমন ভাইরাল হওয়া খবরে বলা হয়েছে--
"এক বছরের জন্য বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত।"
অথচ দেবী শেঠি এক বছরের কথা বলেননি। তিনি বলেছেন দেশে কিম্বা বিদেশে বিমান-বাস-ট্রেনে চলাচল এড়িয়ে চলার জন্য।
ভাইরাল পোস্টে বলা হয়েছে-
"২. আগামী এক বছর বাইরের খাবার খাবেন না।" এবং "৩. বিয়ে বা অন্যান্য অনুরূপ অনুষ্ঠানে যাবেন না।"
কিন্তু দেবী শেঠি তার লেখায় বাইরে খেতে নিষেধ করেন নি। এবং বিয়ের কথা উল্লেখ করেন নি।
এরকম আরও বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেবী শেঠির লেখায় নেই; যা ভাইরাল হওয়া খবরে আছে। এবং এক বছর বা ছয় মাসের কোনো সময়সীমার কথাও নেই টাইমস অব ইন্ডিয়ার ব্লগের লেখায়।
চতুর্থত:
ডাক্তার দেবী শেঠি নিজেও বলেছেন যে, করোনা মোকাবেলায় ২২টি পরামর্শ দেয়ার যে খবর ছড়িয়েছে সেটির সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি এরকম বিশেষায়িত (২২টি পয়েন্টে যেমন উল্লেখ রয়েছে) কোনো পরামর্শ দেননি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট তাদের একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদনে ডা. শেঠির বক্তব্য প্রকাশ করেছে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে সূত্রবিহীনভাবে প্রকাশিত খবরটির মধ্যে যে ২২টি পরামর্শ দেবী শেঠির নামে প্রচার করা হয়েছে তার বেশিরভাগই বানোয়াট; যা দেবী শেঠি বলেননি।