নকশার ছবিকে স্টেডিয়ামের বাস্তব ছবি বলে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পানির নিচে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনা হিসেবে ২০১৫ সালে এক স্থপতির তৈরি একটি নকশার ছবি এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ছবিটি দুবাইয়ে অবস্থিত পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়ামের। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৮ জানুয়ারি 'Department of English (Satkhira Government College)' নামের একটি পাবলিক গ্রুপে 'Sîlëñt Pāíñ' নামের একটি আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়াম, দুবাই।" ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, পোল্যান্ডের স্থপতি খ্রিস্তফ কোতালা ২০১৫ সালে সমুদ্রের নিচে একটি টেনিস স্টেডিয়াম তৈরির একটি নকশা করেন। আলোচ্য ছবিটি সেই নকশার এবং এই নকশায় কোনো টেনিস স্টেডিয়াম কোথাও তৈরি হয়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফক্স স্পোর্টসে ২০১৫ সালের ১৮ মে 'Polish architect proposes underwater tennis court in Dubai' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Krysztof Kotala of Poland’s 8+8 Concept Studios has put forward plans for an underwater tennis court off Dubai’s coast, and is now looking for backers to make it a reality. (বঙ্গানুবাদ-পোল্যান্ডের ৮+৮ কনসেপ্ট স্টুডিওর খ্রিস্তফ কোতালা দুবাইয়ের উপকূলে একটি আন্ডারওয়াটার টেনিস কোর্টের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন, এবং এখন এটিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য অর্থদাতার সন্ধান করছেন)। অর্থ্যাৎ পোলিশ স্থপতি খ্রিস্তফ কোতালা ২০১৫ সালে একটি আন্ডারওয়াটার টেনিস গ্রাউন্ডের সম্ভাব্য নকশা প্রস্তুত করেন। ওই নকশার ছবিটি ও আলোচ্য ফেসবুক পোস্টের ছবিটি এক। স্ক্রিনশট দেখুন--
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ৮+৮ স্টুডিওর ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে ৮+৮ স্টুডিওর অনেকগুলো প্রজেক্টের মধ্যে একটি হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায় আলোচ্য ছবিটি। স্ক্রিনশট দেখুন--
৮+৮ স্টুডিওর ওই প্রজেক্টের ছবিটিতে ক্লিক করলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় সেখানেই যুক্ত করা একটি লিংকে। প্রজেক্টের আলোচ্য ছবির স্টেডিয়ামটির সাথে মূল লিংকটি যুক্ত করার ছবির স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিতে যুক্ত করা 'Go to link'-এ ক্লিক করে 'dubaireef.com' নাম একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, খ্রিস্তফ কোতালার করা ওই টেনিস গ্রাউন্ডটির নকশা এবং যাবতীয় তথ্য ওই ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আরাবিয়ান বিজনেসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রজেক্টের ডিজাইন অনুযায়ী টেনিস গ্রাউন্ডটি বানানোর জন্য অর্থ যোগানদাতা খুঁজছেন খ্রিস্তফ। এছাড়াও, ফোর্বসের একটি প্রতিবেদন থেকেও তখন জানা গিয়েছিল, ওই টেনিস মাঠটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
তবে, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই 'Where are they now? Dubai’s underwater tennis stadium' এরাবিয়ান বিজনেসের করা আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খ্রিস্তগ কোতালা এরাবিয়ান বিজনেসকে ২০১৯ সালে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
সুতরাং পানির নিচে নির্মাণের উদ্দেশ্যে তৈরি একটি টেনিস স্টেডিয়ামের নকশার ছবিকে বাস্তব স্টেডিয়ামের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।