৩ নেতার মৃত্যুদণ্ড ও সংঘর্ষে ২০ জন আহতের বিভ্রান্তিকর খবর ফেসবুকে
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, শিরোনামে ৩ নেতার মৃত্যুদণ্ড ও সংঘর্ষে ২০ জন আহতের কথা লেখা হলেও বিষয়বস্তুতে এরকম কোনো তথ্য নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় ৩ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২০ জন। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ৮ জানুয়ারি 'আন্তর্জাতিক খবর' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "বিক্ষোভে ৩ নেতার মৃত্যুদন্ড!সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ২০'৫ছাত্রলীগ নেতা আটক!"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ, টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি ওই পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ৩ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সংঘর্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ৩ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এবং সংঘর্ষে ২০ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা লেখা হলেও ভিডিওটির বিষয়বস্তুতে এমন কোনো তথ্য নেই। বরং ভিডিওটিতে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুতে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সংযুক্ত ভিডিওটির ৩৫-৪২ সেকেন্ডে সংবাদ শিরোনাম হিসেবে বলা হচ্ছে, 'পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, একদিনেই নিহত অন্তত ১২'। পরে, ভিডিওটির ৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে সংবাদের মুল বিষয়বস্তু হিসেবে বলা হয়, ''লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিক্ষোভকারীরা দেশটির একটি বিমানবন্দরে হামলার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। মূলত গত এক মাস ধরে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত রয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেরুর পুনো অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর জুলিয়াকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে রক্তপাতের নতুন এই ঘটনাটি ঘটে বলে স্থানীয় ন্যায়পাল অফিসের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোকে। পরে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাকে বন্দি করা হয়। আর এরপর থেকেই কার্যত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে...''। অর্থ্যাৎ, ভিডিওর বিষয়বস্তু থেকে দেখা যায়, সংঘর্ষ এবং সংঘর্ষে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে।
অনুসন্ধানে দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১০ জানুয়ারি 'পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, একদিনেই নিহত অন্তত ১২' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির বক্তব্য হুবহু খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন---
তবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশে কিংবা ভিন্ন কোনো দেশে "বিক্ষোভ অংশ নেওয়ায় ৩ নেতার মৃত্যুদণ্ড বা কোনো সংঘর্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া" সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় তিন নেতার মৃত্যুদণ্ড এবং সংঘর্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিত্তিহীন খবর প্রচারিত হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।