মুসলিম নারীকে হিন্দু দাবি করে সাম্প্রদায়িক রং মিশিয়ে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভিডিওর নারী হিন্দু নন বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং তাকে চুরির অভিযোগে হেনস্থা করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও এবং কিছুক্ষেত্রে ভিডিওটির লিংক পোস্ট করে বলা হয়েছে; কক্সবাজারে হিন্দু নারীকে হিজাব না পরার কারণে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০৭ অক্টোবর ‘Hindu Voices’ নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, 'Horrible. No Hindu girl can even walk in Bangladesh without wearing Hijab, Welcome to new Bangladesh of Muhammad Yunus, Now No one stand for hindus in Bangladesh so we have to speak '। পোস্টটির স্ক্রিনশটের কোলাজ দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওর নারী হিন্দু নন বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এছাড়াও তাকে চুরির অভিযোগে হেনস্থা করা হয়েছে, হিজাব না পরার অপরাধে নয়।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে গত ৫ অক্টোবর প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, টিকটকার কোহিনুর আবার কক্সবাজারে জনতার হাতে ধরা পড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে গত ৯ অক্টোবর “কক্সবাজার রামুতে মোবাইল চুরি করে ধরা খেলো tiktok আর কোহিনুর” শিরোনামে ফেসবুকে প্রকাশিত আলোচ্য ঘটনার একটি দীর্ঘ সংস্করণের ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়াও একই তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে কোহিনুরের টিকটক অ্যাকাউন্টের লিংকও উল্লেখ করা হয়। আলোচ্য ভিডিওর স্থিরচিত্র (বামে) ও ফেসবুকে পাওয়া দীর্ঘ সংস্করণের ভিডিওটির স্থিরচিত্রের (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
পরবর্তীতে গুগল স্ট্রিট ভিউ ব্যবহার করে কক্সবাজারের রামু উপজেলার সিটি স্টে হাউজ এর দৃশ্যের সাথে আলোচ্য ঘটনার দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুকে পাওয়া দীর্ঘ সংস্করণের ভিডিওটির স্থিরচিত্র (বামে) ও রামু সিটি স্টে হাউজ এর দৃশ্যের (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
অর্থাৎ ভিডিওটি কক্সবাজারের রামুর সিটি স্টে হাউজের কাছাকাছি স্থান সহ এর নিচতলায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এবং দৃশ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যতা অনুযায়ী চুরির অভিযোগে লাঞ্ছিত করার ঘটনার স্থানটিও নিশ্চিত হওয়া যায়। দেখুন--
এ বিষয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বুম বাংলাদেশকে বলেন, "ভিডিওতে লাঞ্ছিত হওয়া নারীর নাম কোহিনুর এবং তিনি কুতুব আলম শরণার্থী শিবিরের একজন রোহিঙ্গা মুসলিম নারী এবং একজন টিকটক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যিনি কুতুব আলম রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি গ্রাম থেকে চুরির অভিযোগে ধরা পড়েছিলেন।"
এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের টেকনাফ এলাকায়ও একই অভিযোগে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। কোহিনুরের বিরুদ্ধে টেকনাফ বা কক্সবাজারের উখিয়া থানায় কোনো মামলা হয়নি বলেও লিপু বুম বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।
টিকটক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোহিনুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুম বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ভিডিওতে থাকা নারী তিনি এবং এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় নেই। তবে তিনি ভিডিও বা হামলার কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি।
অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওর নারী হিন্দু নন এবং তাকে হিজাব সম্পর্কিত কোনো কারণে হেনস্থা করা হয়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে 'হিন্দু নারীকে হিজাব না পরার কারণে লাঞ্ছিত করা হয়েছে' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে; তা বিভ্রান্তিকর।