বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমেরিকাকে স্যাংশন দেওয়ার দাবিটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আমেরিকার দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুয়া ক্যাপশন দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, আমেরিকাকে স্যাংশান বা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৪ জুন 'Afia Kabir' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "খেলা জমে উঠেছে। এবার আমেরিকাকে স্যাংশন দিল বাংলাদেশ।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ওই ভিডিওটিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি বক্তব্যকেই ভুয়া ক্যাপশন দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
পোস্টের ভিডিওটি যাচাই করে ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির ফেসবুক পেজে "আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না : প্রধানমন্ত্রী" শিরোনামে পোস্টকৃত একটি সংবাদের ভিডিও দেখিয়ে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। সার্চ করে এনটিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিওটি পাওয়া যায়, যা গত ৩ জুন পোস্ট করা হয়। দেখুন--
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা বলেননি। ওইদিনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মানবজমিন, ইত্তেফাক ও বিবিসি বাংলা সহ বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রায় সব গণমাধ্যমই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। কোন সংবাদমাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এমন তথ্য বলা হয়নি।
এদিকে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এনটিভির অনলাইন ভার্সনে "স্যাংশন দেওয়া দেশ থেকে কিছুই কিনব না : শেখ হাসিনা" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যা প্রকাশিত হয় গত ১৩ মে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেওয়া দেশ থেকে কিছু না কেনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘স্যাংশন দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি, তাদের ওপরই স্যাংশন দেওয়া হচ্ছে। আমি বলে দিয়েছি, যেদেশ স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে আমি কিছুই কিনব না।’" তবে, অন্যদেশের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বলা হলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমেরিকার উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের মত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, আমেরিকার উপরে বাংলাদেশ সরকার কোনোপ্রকার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে কি না জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে এরকম কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে নতুন ভিসানীতি প্রণয়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওই ভিসা নীতিটি গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।