এটি তাজিকিস্তান-চীন সীমান্তে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার ছবি নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে সুনামি পরবর্তীকালে তোলা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার ছবি এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ছবিটি সম্প্রতি চীন-তাজিকিস্তান সীমান্তে ঘটা ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি 'Sufyes Bin Alamin' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "তাজিকিস্তান ও চীন সীমান্তে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যেসব দেশে অনূভুত হয়েছে: তাজিকিস্তান, চীন,পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান এবং কিরগিজস্তান। ⚠️বহু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ওই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি সম্প্রতি তাজিকিস্তান-চীন সীমান্তে ঘটা ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে ধারণ করা।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় ঘটা সুনামির পরে তোলা হয়।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট 'R Ovylicious'-এ 'Indonesia Alami Bencana Beruntun di Awal Tahun 2021, Musibah atau Azab?(ইন্দোনেশিয়া 2021 এর শুরু থেকেই ধারাবাহিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, দুর্যোগ নাকি শাস্তি?)' শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায়, ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার কোনো একটা দূর্যোগকালে ধারণ করা, তবে সেখানে সময়কালের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ঘটা দূর্যোগ নিয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক আরেকটি ওয়েবসাইট গেলোরা ডট কমে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর 'TNI AU Gunakan Foto Udara untuk Petakan Bantuan di Palu dan Donggala' (ইন্দোনেশিয়ার বিমান বাহিনী পালু এবং ডংগালায় ম্যাপ সহায়তার জন্য এরিয়াল ফটোগ্রাফ ব্যবহার করছে) শিরোনামে করা একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "সেন্ট্রাল সুলাওয়েসির পালু এবং ডংগালায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা শীর্ষ অগ্রাধিকার। সঠিক লক্ষ্যে থাকার জন্য, ইন্দোনেশিয়ার বিমান বাহিনী সাহায্যের বন্টন ম্যাপ করার জন্য এরিয়াল ফটোগ্রাফ ব্যবহার করে। কারণ, শহরাঞ্চলে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাহিদার থেকে আলাদা। (অনূদিত)" অর্থ্যাৎ ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু এবং ডংগালা শহরে ওই ভূমিকম্প এবং তা থেকে সুনামির ঘটনা ঘটে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর 'Bodies everywhere': Indonesia rescue efforts focus on Palu'(সর্বত্র মৃতদেহ': ইন্দোনেশিয়ার পালুকে কেন্দ্র করে উদ্ধার প্রচেষ্টা) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভিন্ন দিক থেকে তোলা এই একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার দুইদিন আগে ঘটা ভূমিকম্প থেকে সুনামির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওই প্রতিবেদনটি লেখা হয়। ছবিটি থামনিল হিসেবে ব্যবহার করলেও থামনিলটিতে ওই সুনামির ঘটনার ভিডিও যুক্ত করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরকে কেন্দ্র করে ঘটা ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ও এর পরবর্তী সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের একটি স্থানের স্থিরচিত্র আলোচ্য ছবিটি।
সুতরাং ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পের চার বছরের অধিক পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক চীন-তাজিক সীমান্তে ঘটা ভূমিকম্পের সময়কার ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।