যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, "যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিরোধীতা করবে না চীন" এমন কোনো মন্তব্য করেননি চীনা রাষ্ট্রদূত।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি আলোচিত বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিরোধীতা করবে না চীন এমন বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর 'Shamsul Alam' নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন: ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন! কেমন হইল?।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, "যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিরোধীতা করবে না চীন" এমন কোন মন্তব্য করেননি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। মূলত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় চীন ঢাকাকে সমর্থন করে চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চীনা রাষ্ট্রদূতের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি বাংলাদেশের চীনের দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক, টুইটার বা ওয়েবসাইটেও এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আলোচ্য বিভ্রান্তিকর পোস্টের উৎস:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ পরিচালিত 'Voice Bangla' নামের ইউটিউব চ্যানেলে "নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন!" শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও শিরোনামে তিনি আশ্চর্যবোধক চিহ্নের ব্যবহার করেন। খবরের বিশ্লেষণমূলক ওই ভিডিওতে "চীন যদিও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে তবে নির্বাচন নিয়ে কিছু বলেনি। ফলে বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবেনা চীন"- এমন মন্তব্য করেন মোস্তফা ফিরোজ। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য কি ছিল?
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিরোধীতা করবে না চীন" এমন কোনো মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন পাওয়া না গেলেও "হস্তক্ষেপ বিরোধী বাংলাদেশের অবস্থানে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে চীন” শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ২৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, "জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় চীন ঢাকাকে সমর্থন করে, যাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। মানবজাতির ভবিষ্যৎ ও ভাগ্যের উন্নয়নে সব দেশকে শীতল যুদ্ধের মানসিকতা ও জিরোসাম গেম ত্যাগ করতে হবে, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ ও একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে এবং একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করতে হবে, যার মাধ্যমে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি, সার্বজনীন নিরাপত্তা ও অভিন্ন সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরুর কথা জানানোর পর চীনা রাষ্ট্রদূত উপরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত বক্তব্য প্রদান করেন। তবে ইয়াও ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কথা উল্লেখ করে কিংবা ভিসা নীতি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি।
অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিরোধিতা করবেনা বলে চীনের রাষ্ট্রদূত কোনো মন্তব্য করেননি।
সুতরাং চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না বলে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের নামে বিভ্রান্তিকর দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।