পুরোনো ভিডিও দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুমোদনের দাবি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয় আর ভিডিওটি ৫ বছর আগে তৎকালীন সেনাপ্রধান শফিউল হকের দায়িত্ব হস্তান্তরকালে ধারণকৃত।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ৭ জুন "রাণীনগর জিরো পয়েন্ট যুবদল" নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি রিলস ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির উপরে লেখা রয়েছে, "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন" এবং, "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো সেনাবাহিনী"। ভিডিওটির আবহে বা ভয়েসওভারে টেলিভিশন খবরের আদলে একই তথ্য উপস্থাপন করতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে ছোট ছোট একাধিক ভিডিও ক্লিপ ও দুটি স্থিরচিত্র যুক্ত করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। আর আলোচ্য রিলস ভিডিওটি ৫ বছর আগে ২০১৮ সালের জুন মাসে তৎকালীন বিদায়ী সেনাপ্রধান আবু বেলাল শফিউল হকের দায়িত্ব হস্তান্তরকালে ধারণ করা। এছাড়াও ভিডিওটিতে যুক্ত স্থিরচিত্র দুটিও পুরোনো এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধারণ করা।
আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Khola Janalay নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৫ জুন "অবসরে গেলেন জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক" শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য আবু বেলাল শফিউল হক ২০১৫ সালের জুন মাসে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ওই প্রতিবেদনটির ৫৬ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত ভিন্ন একটি দিক থেকে তোলা আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রাপ্ত ইউটিউব ভিডিওটি একটিমাত্র ক্লিপে ধারণ করা হলেও আলোচ্য ভিডিওটি কয়েকটি ছোট ছোট ক্লিপে বিভক্ত। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এবারে আলোচ্য পোস্টের ভিডিও থেকে নেয়া একটি স্ক্রিনশট (বামে) এবং ইউটিউব ভিডিও থেকে নেয়া একটি স্ক্রিনশটের (ডানে) মধ্যে তুলনা দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য পোস্টে ভিডিওর শেষ দিকে যুক্ত ছবি দুটির একটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৫ জুন "যতক্ষণ আগুন থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাবাহিনী থাকবে" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের আগুন যতক্ষণ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারবে ততক্ষণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে "নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী" শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচ্য পোস্টে যুক্ত দ্বিতীয় ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ওই প্রতিবেদনটি লেখা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তরের ৫ বছরের পুরোনো ভিডিও এবং সেনাসদস্যদের দুটি স্থিরচিত্র যুক্ত করে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং পুরোনো ভিডিও এবং স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে তৈরি এক রিলস পোস্ট করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।