ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঢাকার গণসমাবেশে উপস্থিত হননি বরং তাঁর সম্মানার্থে চেয়ারটি ফাঁকা ছিল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে টেলিভিশন খবরের আদলে করা একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে, যেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত ১০ ডিসেম্বরে রাজধানীর গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা বলা হচ্ছে। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
১৮ ঘন্টা আগে "Jago Mun" নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "এই মাএ পাওয়া, বিএনপির গণসমাবেশে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন এবং বক্তব্য দিবে । গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলে দলে আসছেন । খোলা মাঠেই রাত কাটাবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা ।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত হওয়া বিএনপির গণসমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, রাজধানীর গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার দাবিটি মিথ্যা। বেগম জিয়া ঢাকা গণসমাবেশে আসেননি এবং তাঁর উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনার দাবিটি সঠিক নয় বরং তাঁর সম্মানার্থে সমাবেশের অতিথিদের মঞ্চে একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছিল।
আলোচ্য পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, টেলিভিশন সংবাদের শিরোনামের আদলে উপস্থাপন করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটির ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে আবহে বলতে শোনা যায়, 'বিএনপি চেয়ারপার্সন আগামীকাল সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বলে অনেক সূত্র জানিয়েছে। তবে, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র এখনো সেটা প্রকাশ করেনি।'
উক্ত শিরোনামের প্রেক্ষিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ৩ ডিসেম্বর 'খালেদা জিয়া কি সমাবেশে থাকছেন?' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ধরনের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনাও তাঁরা নেননি। তা ছাড়া খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে জামিনে থাকলেও এখনো তিনি মুক্ত নন।' স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, গত ১০ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় গণসমাবেশ শুরু হওয়ার পরে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টে 'ঢাকার সমাবেশেও খালেদা ও তারেকের চেয়ার ফাঁকা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতোই ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য মঞ্চে চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে। খালেদা ও তারেকের প্রতি সম্মান জানিয়েছে চেয়ার দুটি ফাঁকা রাখা হয়েছে।' অর্থ্যাৎ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ঢাকার গণসমাবেশে উপস্থিত না থাকলেও দলীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে এই দু'জনের সম্মানার্থে ওই চেয়ার স্থাপন করে সেসব ফাঁকা রাখা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে অনুসন্ধানে বিএনপির গত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) গণসমাবেশের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে তুলে ধরা ১০ দফার অন্যতম হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলতে দেখা যায়। অনলাইন পোর্টাল নিউজবাংলার ওয়েবসাইটে "চমক ছাড়াই বিএনপির ১০ দফা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিএনপির দেওয়া ১০ দফার ৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, "খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।" অর্থ্যাৎ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বর্তমান মামলার রায়ে দেওয়া সাজা বাতিলের দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রসঙ্গত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন। অসুস্থতাজনিত কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি মেলার পর থেকে বেশকিছু শর্ত মেনে গুলশানে নিজের বাসায় থাকছেন খালেদা জিয়া। তবে, নিজের বাসায় থাকা এবং বিদেশ না যাওয়ার শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয় এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আবার, গণমাধ্যমে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থিতির বা বক্তব্য প্রদানের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থ্যাৎ ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের প্রাক্কালে ওই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থিত হওয়া ও বক্তব্য দেওয়ার ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।