ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাহেদ বা সাবরিনা কারোরই আইনজীবী নন
ভুয়া করোনা টেস্ট সার্টিফিকেট বিক্রি করা সাহেদ ও সাবরিনার পক্ষে আদালতে লড়ছেন বিএনপি নেত্রী- এমন ভুয়া খবর ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
করোনা ভাইরাস টেস্টের ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে গত বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেখানে সাহেদ, তার আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসূলিরা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে কয়েকটি আইডি থেকে পোস্ট করা হয় যে, সাহেদের আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এবং সেই পোস্টে দাবি করা হয় , রুমিন আদালতে 'সাহেদ ষড়যন্ত্রে শিকার' বলেও বক্তব্য দিয়েছেন।
এরকম পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
অন্যদিকে আরও কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট উৎপাদন ও বিতরণকারী আরেক প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ার এর ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
স্ক্রিনশটে দেখুন সেরকম পোস্ট--
ফ্যাক্ট চেক:
এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রথমে বুম বাংলাদেশ দেখার চেষ্টা করেছে, মোহাম্মদ সাহেদ ও ডা. সাবরিনার আইনজীবী হিসেবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কাদের নাম এসেছে।
গুগল অ্যাডভান্সড সার্চের মাধ্যমে গত কয়েকদিনের দশটির বেশি মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে সেগুলোর কোথাও সাহেদ কিম্বা সাবরিনার আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার নাম নয়, বরং অন্যদের নাম এসেছে।
যেমন বিডিনিউজের এই প্রতিবেদনে সাবরিনার আইনজীবীদের নাম এসেছে এভাবে-- "পুলিশের রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে সাবরিনার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন ওবায়দুল হক, সাইফুল ইসলাম সুমনসহ কয়েকজন আইনজীবী।"
এছাড়া বাংলানিউজের এই প্রতিবেদনেও আইনজীবী হিসেবে উপরের দুইজনের নামই এসেছে।
(যদিও বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের প্রতিবেদনে একজন আইনজীবীর নাম ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে বুম বাংলাদেশ'কে নিশ্চিত করেছেন সাবরিনার একজন আইনজীবী।)
বাংলাদেশের মূলধারার একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও একটি পত্রিকার দুইজন কোর্ট রিপোর্টারের সাথে কথা বলেছে বুম বাংলাদেশ। তারা উভয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, সাবরিনা এবং সাহেদ কারোর আইনজীবী হিসেবে রুমিন ফারাহান আদালতে দাড়াননি।
জাগোনিউজ এর কোর্ট রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমি এই মামলাগুলো প্রতিনিয়ত কভার করছি। সাহেদ বা সাবরিনার কোনো মামলায় রুমিন ফারহানা আইনজীবী নন। তিনি আদালতেও তাদের পক্ষে দাড়াননি।"
এরপর সাবরিনার আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান তুহিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত তারা তিনজন আইনজীবী সাবরিনার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাকি দুজন হলেন, আব্দুস সালাম, ওবায়দুল হক।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাবরিনার পক্ষে আদালতে দাড়িয়েছিলেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, "এসব তথ্য কোথায় পেয়েছেন আপনি? এখন পর্যন্ত আমরা তিনজন ছাড়া কেউ ডা. সাবরিনার আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাড়াননি।"
সাইফুজ্জামান তুহিন আরও জানান, সাবরিনার আইনজীবী হিসেবে তার নাম কিছু সংবাদমাধ্যমে ভুলভাবে 'সাইফুল ইসলাম সুমন' হিসেবে প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে।
মোহাম্মদ সাহেদের আইনজীবী হিসেবেও মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার নাম পাওয়া যায়নি। বরং নাজমুল হোসাইন ও মনিরুজ্জামানের নাম এসেছে বিবিসি বাংলা, যুগান্তর, বিডিনিউজ, ঢাকা ট্রিবিউন সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
কিছু ফেসবুক পোস্টে 'সাহেদ ষড়যন্ত্রের শিকার'- বলে যে বক্তব্য রুমিন ফারহানার নামে ছড়ানো হয়েছে সেই বক্তব্যটি প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া। "সাহেদের কোমরে দড়ি, আদালতে নিজের পক্ষে যুক্তি" প্রতিবেদনে প্রথম আলো লিখেছে--
"সাহেদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, সাহেদ ষড়যন্ত্রের শিকার। ছয় হাজার করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। কোনো ভুক্তভোগী এই মামলা করেননি। মামলায় সাহেদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে রিমান্ডের আদেশ দেন।"
অর্থাৎ, প্রথম আলোতে যে বক্তব্য 'সাহেদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন' হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে রুমিন ফারহানার বক্তব্য হিসেবে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
যেহেতু রুমিন ফারহানা সাহেদের আইনজীবী হিসেবে আদালতে ছিলেন না, ফলে এই বক্তব্যও তার হওয়ার সুযোগ নেই।
সাহেদের আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। বুম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে তাদের বক্তব্য ছাড়াও উপরে তুলে ধরা তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, রুমিন ফারহানা করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার মোহাম্মদ সাহেদ বা ডা. সাবরিনা কারোরই আইনজীবী নন। এবং তিনি সাহেদের পক্ষে আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি।