একটি মাহফিলকে কেন্দ্র করে দেয়া ঘোষণাকে বিকৃত করে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গোপালগঞ্জে একটি মাহফিলের মেলায় তিন দিন নারীদের না আসতে অনুরোধকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ঘোষণা সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে; বাংলাদেশে নারীদেরকে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি প্রচার করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হয়েছে; বাংলাদেশে নারীদেরকে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে বা দেওয়ার পথে সরকার। আবার কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, নারীদেরকে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ ডিসেম্বর ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা ‘তসলিমা নাসরিন’ তার ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, “জিহাদিস্তানের জিহাদি কার্যক্রম তো অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন ঘোষণাটি শুনে নিন, দোকানপাটে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ।” পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। গোপালগঞ্জে কিংবা সমগ্র বাংলাদেশে নারীদেরকে বাজারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। গোপালগঞ্জের একটি মাহফিলকে কেন্দ্র করে তিন দিনের জন্য বসা অস্থায়ী দোকানের ক্ষেত্রে দেওয়া এক ঘোষণাকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে ভিডিওটির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জ জেলার গওহরডাঙ্গা বাজারে রীতিমতো মাইকে ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার থেকে নারীদের বাজারে এসে কেনাকাটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৌলবাদীরা। মহিলার এলেও তাঁদের কিছু বিক্রি করতে পারবেন না দোকানদাররা।
তবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় দোকানগুলো অনেকটা অস্থায়ী দোকানের ন্যায় এবং ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, “এটা সাধারণ কোনো মেলা নয়, এটা দ্বীনি মাহফিল (ধর্মীয় সমাবেশ)”।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জাগোনিউজ ২৪’-এ গত ০৬ ডিসেম্বর “গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মাহফিল নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ নভেম্বর গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলকে ঘিরে পাশে গড়ে উঠে খাবারসহ বিভিন্ন রকমের দোকান। সেখানে এক ধরনের মেলায় পরিণত হয়। মাহফিলের শৃঙ্খলারক্ষা ও গণজমায়েত এড়াতে এলাকার নারীদের দোকানে না আসার অনুরোধ করে মাইকিং করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘যমুনা টেলিভিশন’-এ গত ৮ ডিসেম্বর “ভিডিওর খণ্ডিত অংশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদ!” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় প্রতিবছরের মতো এবারো ২৭-২৯ নভেম্বর তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষ ও নারীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। মাহফিল ঘিরে হরেক পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। গণজমায়েত এড়াতে ও শৃঙ্খলা রক্ষায় মাহফিল চলাকালে পুরুষ প্রাঙ্গণের অস্থায়ী দোকান গুলোতে নারীদের না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এই অনুরোধ প্রতিবছরই করা হয়ে থাকে। ভিডিও প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
বিভ্রান্তিকর এই প্রচারণার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে 'গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা' কর্তৃপক্ষের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়েছে (১, ২)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 'নাগরিক টেলিভিশন'-এর গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আশিক জামান অভি বুম বাংলাদেশকে জানান, মাদ্রাসাটির তিন দিনব্যাপী মাহফিলকে কেন্দ্র করে বসা অস্থায়ী দোকানে শুধু ঐ তিন দিন নারীদেরকে না আসতে করতে অনুরোধ করা হয়। তবে মাহফিল শেষে নারীদেরকে বাজারে আগের মতই আসা-যাওয়া ও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
অর্থাৎ ভিডিওতে দেওয়া ঘোষণা-অনুরোধ মূলত; গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার তিন দিনব্যাপী বার্ষিক মাহফিলকে (ধর্মীয় সমাবেশ) কেন্দ্র করে বসা অস্থায়ী দোকানপাটে নারীদের না আসতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সারাদেশ কিংবা কোনো অঞ্চলে নারীদের বাজারে না আসা সংক্রান্ত ঘোষণা বা অনুরোধ ছিল না এটি।
তরাং সামাজিক মাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে মাহফিলের অস্থায়ী দোকানের ক্ষেত্রে করা অনুরোধকে সাম্প্রদায়িক রঙ মিশিয়ে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।