ছবিটি ভারতে খুন হওয়া একটি মেয়ের, চাঁদপুরের ঘটনা নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে খুন হওয়া এই মেয়ের ছবিকে চাঁদপুরের মেয়ের বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একজন মেয়ের মৃতদেহের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, এটি চাঁদপুরের তরুণীর ছবি, যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ জানুয়ারি 'চট্ট মেট্রো - Chatta Metro' নামের একটি একাউন্ট থেকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, "৭১ সালে যারা দেখে নাই মা বোনদের ই=জ্জত কিভাবে লু'টয়েছে হায়না জ'ঙ্গির দল ২৪ সাল তাদের কে সুযোগ করে দিয়েছে। #চাঁদপুর_জেলার -- মতলব দক্ষিণ উপজেলার, ১নং নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়ন, ৯ নং ওয়ার্ড সাং পাঁচদোনা গ্রামের সন্ত্রাসীরা ধর্ষন পরে হত্যা করে, আদিবার লাশ ফেলে দায় জঙ্গলে।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবির ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের। ছবিগুলো ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাতিয়ালায় ভাকরা খাল থেকে উদ্ধার করা ২২ বছর বয়সী নিশা নামের এক তরুণীর মরদেহের। তার বাড়ি দেশটির হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের মেন্দি জেলার জোগিন্দরনগরের মাসাসুলি পঞ্চায়েতের সেরু গ্রামে।
ভাইরাল ছবির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২৩ জানুয়ারি মান্ডি লাইভ (Mandi LIVE) নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে মৃতদেহের হুবহু ছবিটি পাওয়া যায়। এই ছবির সঙ্গে সাদা টিশার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরা এক তরুণীর ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ভাকরা খালের পাতিয়ালা-সাংরুর সড়কের পাশ থেকে নিশার নামের এই তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিজ প্রেমিকের হাতেই তিনি খুন হন। এই অভিযোগে তরুণীর ফতেহগড়ের প্রেমিক যুবরাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। (সংক্ষেপিত) পোস্টটি দেখুন--
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “Himachal Woman's Body Found In Bhakra Canal Hours After She Went Out With Policeman Friend” শিরোনামে ‘নিউজ ১৮’ এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে মান্ডি লাইভ (Mandi LIVE) এর ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত প্রথম ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাতিয়ালায় ভাকরা খালে ২২ বছর বয়সী নিশার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তাঁকে হত্যার অভিযোগে কথিত প্রেমিক যুবরাজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের ছবিগুলো চাঁদপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া কোনো বাংলাদেশি তরুণীর নয় বরং ছবিগুলো ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাসিন্দা তরুণ নিশার মরদেহের এবং তার লাশ উদ্ধার করা হয় দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে।
এদিকে, আলোচ্য পোস্টে মৃতদেহের পরিচয় হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, মেয়েটির নাম আদিবা। তার বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “চাঁদপুরে নিখোঁজের ৩ দিন পর মিলল শিশুর মরদেহ" শিরোনামে গত ২৩ জানুয়ারি ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনলাইনে শিশু আদিবার ছবি সহ প্রকাশিত একটি খবর পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে নিখোঁজের তিন দিন পর আদিবা (৮) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার নায়েরগাঁও ইউনিয়নের পাঁচদোনা গ্রামের একটি পুরোনো খড়ের স্তূপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। এ ঘটনায় ইমন ও ইয়াছিন নামের দুজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিগুলো ভারতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এক তরুণীর, বাংলাদেশের কারো নয়। আর চাঁদপুরে আদিবা নামের এক ৮ বছর বয়সী যে শিশুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেটি ভিন্ন ঘটনার ভিন্ন ছবি, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং ভারতের হত্যাকাণ্ডের শিকার এক তরুণীর ছবি দিয়ে চাঁদপুরের মতলবে এক শিশুর হত্যাকাণ্ডের খবর বিভ্রান্তিকর তথ্য সহ প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।